৯৬% পরিবারে মোবাইল ফোন : বিবিএস

রয়টার্স প্রতীকী ছবি।
রয়টার্স প্রতীকী ছবি।

আপনি ভাবুন তো, আপনার বাড়িতে কোনো মোবাইল ফোন নেই, কোনো টেলিভিশন নেই। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম নেই। চিত্তবিনোদনের সুযোগ নেই। এমন পরিবেশে এই যুগে আপনি চলতে পারবেন? উত্তর হবে, অবশ্যই না। মোবাইল ফোন ও টেলিভিশন এখন শহর-গ্রামনির্বিশেষে প্রায় অপরিহার্য হয়ে গেছে। এই দুটি অপরিহার্য যন্ত্র ব্যবহারে বেশ ভালো খবর আছে। বাংলাদেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ পরিবারে অন্তত একটি ল্যান্ডফোন বা মোবাইল ফোন আছে। আর টেলিভিশন আছে ৫০ শতাংশের বেশি পরিবারে। ছয় বছরে ফোন ও টেলিভিশনের ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এ এই চিত্র উঠে এসেছে।

বিবিএসের এ সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সারা দেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ পরিবারে মোবাইল বা ল্যান্ডফোন ছিল। আর ৩৮ শতাংশ পরিবারে ছিল টেলিভিশন। গত সপ্তাহে বিবিএস এই সমীক্ষার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে।

বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশে ৩ কোটি ৯৩ লাখ পরিবার আছে। মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের হিসাবটি বিবেচনায় আনলে দেখা যায়, দেশের ৩ কোটি ৭৭ লাখ পরিবারের সদস্যদের অন্তত একটি মোবাইল ফোন আছে। আর প্রায় ২ কোটি পরিবারে টেলিভিশন আছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দেশের গরিব মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে মোবাইল ফোন। এর মানে, গরিব মানুষ মোবাইল ফোনে শুধু কথা বলেন না। পণ্যের বাজারের হালনাগাদ তথ্যও আদান-প্রদান করেন তাঁরা, যা বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে।

বিবিএসের সমীক্ষায় শুধু মোবাইল ফোন ও টেলিভিশন ব্যবহারের চিত্রই উঠে আসেনি; উঠে এসেছে ইন্টারনেট, রেডিও, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ, নারীর মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্র। এমনকি শিক্ষা, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যুর হারসহ সামাজিক খাতের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তও উঠে এসেছে এ সমীক্ষায়।

>

৫০% পরিবারে টেলিভিশন আছে।
৩৭% পরিবারের অন্তত একজন সদস্য ইন্টারনেট ব্যবহার করেন
রেডিওর ব্যবহার কমে গেছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল ফোন ও টেলিভিশনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে তথ্যের অবাধ প্রবাহ হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রান্তিক উদ্যোক্তারা বাজারের হালনাগাদ খোঁজখবর রাখতে পারেন। ফলে বাজারের সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে, যা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, মোবাইল ফোন ও টিভির সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহার বেড়েছে। জনগণ এখন দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সহজেই কথা বলতে পারেন। প্রবাসীরাও দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন।

এক সময় বিদেশি কোম্পানির হাতে মোবাইল ফোন ও টিভির বাজার থাকলেও গত কয়েক বছরে একাধিক দেশি কোম্পানির আগমন ঘটেছে। যেমন, মোবাইল ফোনের বাজারে এসেছে ওয়ালটন ও সিম্ফনি। স্যামসাং সম্প্রতি বাংলাদেশে কারখানা নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া ট্রান্সটেক, ওয়ালটন, গোল্ডস্টার, মাইওয়ানের মতো দেশি টেলিভিশন ব্র্যান্ডও আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক কৃষক ও উদ্যোক্তারা বাজার, কৃষিতথ্য, মজুরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারছেন। এই যোগাযোগ বাজারব্যবস্থাকে আরও সমন্বিত করছে। বাজারব্যবস্থা যত সমন্বিত হবে, অর্থনীতি ততই লাভবান হবে।

সমীক্ষার তথ্য

এখন শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় না। হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে স্মার্টফোন। স্মার্টফোনের বদৌলতে হাতের মুঠোয় এখন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট থাকলে ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো মুঠোফোনে সহজে ব্যবহার করা যায়। বিবিএস বলছে, বাংলাদেশে এখন ৩৭ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তবে মোবাইল ফোনের এই যুগে বাসাবাড়িতে কম্পিউটার রাখার প্রবণতা খুব বেশি বাড়েনি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ পরিবারে কম্পিউটার ছিল। সেখানে গত ছয় বছরে বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ।

নারীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়েছে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশেরই নিজের মোবাইল ফোন আছে। আর তিন মাসে কমপক্ষে একবার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ নারী।

টেলিভিশন-মোবাইল ফোনের যুগে রেডিও যেন অচল হয়ে গেছে। রেডিওর ব্যবহার বেশ কমেছে। ছয় বছরে আগে যেখানে ৪ শতাংশের মতো পরিবারে রেডিও ছিল, এখন তা আধা শতাংশে নেমে এসেছে।

এই বিষয়ে বিবিএসের পরিচালক (জনসংখ্যাতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য শাখা) মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ বিভিন্ন সামাজিক খাতের প্রবণতা বোঝার চেষ্টা করি। এখানে আমাদের কাজ হলো তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা। সমাজে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব তো আছে। কোথায় কী ধরনের প্রভাব, তা গবেষকেরা আরও ভালো বলতে পারবেন।’