সিমেন্টে বিদেশি যারা

.
.

বাংলাদেশে সিমেন্ট খাতে বিদেশি কোম্পানি চারটি। হংকংয়ের শুন শিং গ্রুপের সেভেন রিংস, জার্মানভিত্তিক হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও থাইল্যান্ডভিত্তিক সিয়াম সিটি সিমেন্টের ইনসি সিমেন্ট বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে বাজার হিস্যা বেশি সেভেন রিংস সিমেন্টের। অন্যদিকে আলট্রাটেক বাংলাদেশে ২০১১ সালে ব্যবসা করতে এসে খুব বেশি ভালো করতে পারেনি। এখন সেটি হাইডেলবার্গ সিমেন্টের কাছে বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সেভেন রিংস

শুন শিং গ্রুপ ১৯৮৮ সালে হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত। তারা মূলত সিমেন্টের কাঁচামালের ব্যবসা করত। উৎপাদনশীল খাতে প্রথম বিনিয়োগের জন্য গ্রুপটি বাংলাদেশকেই বেছে নেয়। ১৯৯৯ সালে তারা সেভেন সার্কেল বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং সেভেন রিংস সিমেন্ট নামে ব্র্যান্ড তৈরি করে। তাদের প্রথম কারখানা গাজীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে। ওই কারখানার উৎপাদনক্ষমতা এখন বছরে ১৯ লাখ টন।

এরপর সেভেন রিংস সিমেন্ট আরেকটি কারখানা করে ২০১৪ সালে, খুলনায় রূপসা নদীর তীরে। এর উৎপাদনক্ষমতা বছরে ১৬ লাখ টন। দুই কারখানা মিলে সেভেন রিংসের মোট উৎপাদনক্ষমতা বছরে ৩৫ লাখ টন। সেভেন রিংস বলছে, তারা উৎপাদনক্ষমতায় দেশের শীর্ষ সিমেন্ট উৎপাদকদের একটি। অন্যদিকে মানের দিক দিয়েও সেরাদের মধ্যে রয়েছে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট

জার্মানভিত্তিক হাইডেলবার্গ সিমেন্ট এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে মূলত ১৯৯৮ সালে। শুরুতে কোম্পানিটি চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় একটি ভাসমান প্যাকিং টার্মিনাল তৈরি করে। এরপর ১৯৯৯ সালে কোম্পানিটি ঢাকার অদূরে স্ক্যান সিমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে সাড়ে ৭ লাখ উৎপাদনক্ষমতার একটি কারখানা স্থাপন করে। ২০০০ সালে এসে চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৩ সালে এসে স্ক্যান সিমেন্ট ও চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার কোম্পানি দুটি একীভূত হয়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ নামে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানিটির বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে স্ক্যান সিমেন্ট ও রুবি সিমেন্ট এ দুই নামে কোম্পানিটির উৎপাদিত সিমেন্ট বাজারে রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে রয়েছে তাদের দুটি কারখানা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশে কার্যক্রম রয়েছে বহুজাতিক এ সিমেন্ট কোম্পানির। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক এ কোম্পানি ২০১৮ সাল শেষে প্রায় ৮১ কোটি টাকা কর–পরবর্তী মুনাফা করেছে।

লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট

গত বছর হোলসিম বাংলাদেশকে কিনে নিয়ে কোম্পানিটির নাম হয়েছে লাফার্জহোলসিম। এর আগে কোম্পানিটি এ দেশে লাফার্জ নামে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যায়। সিমেন্ট খাতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় লাফার্জের। এটির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ডলার। গত বছর ৫০৮ কোটি টাকায় হোলসিমকে কিনে নেয় লাফার্জ। লাফার্জ ও হোলসিম এক হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে এটির বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ মেট্রিক টনে। আর কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারটিতে। সিলেটের ছাতকে অবস্থিত কারখানায় নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে সিমেন্ট উৎপাদন করে লাফার্জ। ভারতের মেঘালয় থেকে সরাসরি কাঁচামাল কারখানায় আনতে লাফার্জের রয়েছে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কনভেয়ার বেল্ট। ২০০৩ সালে লাফার্জ একমাত্র গ্রিনফিল্ড (উৎপাদন শুরুর আগে) কোম্পানি হিসেবে এ দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।