চায়ের দেশে খাবার মেলা

মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে আজ শুরু হয়েছে ‘ফুড ফেস্টিভ্যাল’। ছবি: প্রথম আলো
মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে আজ শুরু হয়েছে ‘ফুড ফেস্টিভ্যাল’। ছবি: প্রথম আলো

পপ কেক, অ্যারাবিয়ান কোনাফা, ইতালিয়ান লাজানিয়া বা স্ট্রবেরি চিজ কেক—চায়ের রাজ্য হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের মানুষের কাছে এসব খাদ্য খুব পরিচিত না। আর এসব খাবার যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরাও পরিচিত নন। তবে ঘরে তৈরি করে বিভিন্ন স্বাদের খাবার বিক্রি করছেন অনেক উদ্যোক্তা। কিন্তু তাঁদের তৈরি খাবারের প্রচার তেমন একটা হচ্ছে না। অনেকেই উদ্যোক্তার খবর জানতে পারছেন না। সেই খাবার ও তার স্বাদ সাধারণের মধ্যে পরিচিত করতেই আয়োজন করা হয়েছে ‘ফুড ফেস্টিভ্যাল’।

আজ সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে ফুড ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উদ্যোক্তা অনলাইনে নানা রকম পণ্যের ব্যবসা করছেন। এর মধ্যে আছে দেশি-বিদেশি নানা রকম খাদ্য। নিজেরা তৈরি করে পরিচিত মহলে তা অনলাইনে বিক্রি করেন। কিন্তু তার প্রচার এখনো ব্যাপকতা পায়নি। এই উদ্যোক্তাদের তৈরি খাবারের নাম ও স্বাদ সাধারণের মধ্যে পরিচিত করতেই আয়োজন করা হয়েছে ফুড ফেস্টিভ্যালের। অনলাইন উদ্যোক্তা সোনিয়া মান্নান, ফারহাত আহমেদ, সুবর্ণা আক্তারসহ কয়েকজন এই আয়োজনের পেছনে কাজ করেছেন। উৎসবে ১২টি অনলাইন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে বেকিং স্টোরি, সেপার, নবান্ন, ক্রিয়েটিভ ক্রিয়েশন, সুইট সেনসেশন, কুকিং স্টুডিও, আওয়ার কুকিং স্টোরি, স্নেক হেক, পরাগ, আপ্যায়ন, মমো বাই মিমো ও ফুডিনেটর। এগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা সদরের অন্যতম প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফুড।

আয়োজকদের অন্যতম সুবর্ণা আক্তার আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরোয়াভাবে যাঁরা অনলাইনে ব্যবসা করেন, তাঁদের তৈরি খাবারের পরিচিতি সাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা কয়েকজন এই উদ্যোগ নিয়েছি। উৎসবে দেশি-বিদেশি অনেক ধরনের খাবার আছে। নতুন অনেক খাবারের সঙ্গে উৎসবে সবাই পরিচিত হতে পারবেন।’ সুবর্ণা আক্তার জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান সেপার ছয় ধরনের খাবার নিয়ে উৎসবে এসেছে। এর মধ্যে অনেকের কাছেই নতুন খাবার হচ্ছে পনির টিক্কা, ক্যারামেল টার্ট, বেসনের লাড্ডু, পাপড়ি চার্ট ইত্যাদি।

আজ বেলা দেড়টার দিকে উৎসবে গিয়ে দেখা গেছে, খাদ্যরসিকদের বেশ ভিড়। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন। অনেকে কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

ফুডিনেটরের ফারহাত আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ও অপরিচিত খাবারগুলোই বেশি চলছে। নতুন খাবারের স্বাদ নিতে অপরিচিত খাবারই পছন্দ করছেন উপস্থিত হওয়া লোকজন। ফুডিনেটরে সাত ধরনের খাবার আছে। তার মধ্যে সাধারণের জন্য নতুন হিসেবে আছে পপ কেক, অ্যারাবিয়ান কোনাফা, ইতালিয়ান লাজানিয়া ইত্যাদি।

জমে উঠেছে ‘ফুড ফেস্টিভ্যাল’। ছবি: প্রথম আলো
জমে উঠেছে ‘ফুড ফেস্টিভ্যাল’। ছবি: প্রথম আলো

মাইশা ফারজানা চৌধুরীর বেকিং স্টোরি নিয়ে এসেছে ১১ ধরনের কেক। তার মধ্যে ব্যতিক্রম স্বাদে আছে ট্রিপল লেয়ার, চকো সুজ, স্ট্রবেরি চিজ কেক, ক্যারামেল কেক ইত্যাদি। একই রকম নাবিলা কোরায়শীর ক্রিয়েটিভ ক্রিয়েশন সাত ধরনের কেক নিয়ে এসেছে উৎসবে। এর মধ্যে নতুন হচ্ছে রেড ভেলভেট।

মমো বাই মিমোর প্রিয়াংকা সেনগুপ্তা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎসবের উদ্যোগটি খুবই ভালো। অনেকেই নানা রকম খাদ্য তৈরি করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ জানেন না। এই উৎসবের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আমি উৎসবে এসেছি মূলত আমার প্রতিবন্ধী দেবরের জন্য। উৎসবে তার পরিচিতিটা তৈরি করতে। ও যাতে নিজের মতো দাঁড়াতে পারে।’ প্রিয়াংকা সেনগুপ্তা জানালেন, তাঁর তৈরি খাদ্যের মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে চিকেন মমো। এটা তিব্বতি খাবার। অনেকের কাছেই নতুন। এ ছাড়া ছানার পায়েস, ক্ষীরের সন্দেশ, তিলের নাড়ুর মতো পরিচিত খাদ্য আছে তাঁর স্টলে। এ রকম প্রায় প্রত্যেক উদ্যোক্তার স্টলেই বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন রকম নতুন স্বাদের খাবার আছে। কাল মঙ্গলবার রাত নয়টা পর্যন্ত উৎসব চলবে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই উদ্যোগ খুবই ভালো। সবাই যার যার মতো কিছু করতে চাইছে। আমার পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি।’

আজ এই খাবারের উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পৌর কাউন্সিলর মনবীর রায়। দুদিনব্যাপী এই ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে অনলাইন উদ্যোক্তাদের সংগঠন মৌলভীবাজার অনলাইন এন্ট্রাপ্রেনিউয়ার্স ফোরাম। উৎসবে সার্বিক সহযোগিতা করছে মৌলভীবাজার পৌরসভা।