এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪২৩%

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

কয়েক দিন বাড়ার পর এক দিন স্থিতিশীল ছিল দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দর। তবে বেড়েছে বিদেশি পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৪০-২৫০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২২০-২৩০ টাকা এবং চীন-মিসরের বড় পেঁয়াজ ১৬০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে টিসিবির হিসাবে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় পেঁয়াজের দাম এখন ৪২৩ শতাংশ বেশি।

ঢাকার তিন পাইকারি বাজারে গতকাল সোমবার দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২১৫ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আগের দিনও একই দামে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের পরিমাণ আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি দেখা যায়। যদিও বাজার প্রায় ফাঁকাই ছিল।

তবে বেড়েছে চীন ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম। গতকাল কারওয়ান বাজারে চীনা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০ টাকা চান পাইকারি বিক্রেতারা, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ টাকা বাড়তি। চীনা পেঁয়াজের সরবরাহ খুব কম ছিল। মিরপুর ১ নম্বর বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে চীনা পেঁয়াজ দেখা যায়নি। অন্যদিকে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, সেখানে চীনা পেঁয়াজ কম।

কিছুটা বেড়েছে পাকিস্তানি পেঁয়াজের দামও। গতকাল কারওয়ান বাজারে যা ১৮০-১৮৫ টাকা ছিল, সেটা গতকাল ১৯০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে দু-একটি দোকানে পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়। খুচরা বাজারে এ পেঁয়াজ দেখা যায়নি।

পাইকারি বাজারে বেশ কয়েক দিন তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে মিসরের পেঁয়াজ। সেটা এখন একেবারে নেই বললেই চলে।

অবশ্য বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। শ্যামবাজারে মিয়ানমারের ছোট পেঁয়াজ ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা এবং ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান পাইকারি বিক্রেতারা।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে দু-একটি করে ট্রাক এলে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই কাড়াকাড়ি লেগে যায়। যেদিন যে পেঁয়াজের চালান আসে, সেদিন সেই পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি মনে হয়।

>

বাজারে এখন প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম হেরফের হয়। গতকাল পাইকারি বাজারে বিদেশি পেঁয়াজই কম ছিল। দামও বেড়েছে।

শ্যামবাজারের একজন আমদানিকারক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, তাঁর আড়তে গতকাল কোনো পেঁয়াজই ছিল না। কয়েক দিন তিনি পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। আরেক আমদানিকারক বলেন, বাজারে মিয়ানমারের কিছু পেঁয়াজ এসেছে। সেটাই কেনাবেচা হচ্ছে।

পেঁয়াজের এই সংকটের শুরু সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে। ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। এরপরের ধাক্কা আসে ২৯ সেপ্টেম্বর, ভারত রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এ ধাক্কায় ৫০ টাকার পেঁয়াজ ১৫০ টাকা ছাড়ায়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর। এরপর লাফ দিয়ে পেঁয়াজের দর প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় ওঠে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর। এরপর দাম কিছুটা কমেছিল। গত মঙ্গলবার থেকে দাম আবার বাড়ছিল।

সোমবার দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকার কারণ জানান কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাঁরা বলেন, পেঁয়াজ এখন নেই। তারপরও যেটুকু আছে তা আগামী সপ্তাহ দেড়েকের মধ্যে বিক্রি শেষ করতে হবে। শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, শীত পড়ে গেছে। এখন দেশি পেঁয়াজ রেখে দিলে গাছ বেরিয়ে যাবে। ভালো দাম পেয়ে মানুষ অপরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে কিছুদিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়বে আশা করা যায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। গত রোববার এফবিসিসিআইয়ের বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ১০ দিনের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ পুরোদমে উঠতে শুরু করবে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের চালান জাহাজে আসবে। সিটি গ্রুপের একটি চালানে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ব্যয় ৩২ টাকার মতো পড়বে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, তারা ঢাকায় ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। ট্রাকের সংখ্যা ৫০। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে ৫ থেকে ১০টি করে ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলীবাগ বস্তির বাসিন্দা জামেনা বেগম বলেন, টিসিবির পেঁয়াজ কোথায় বিক্রি হয় তা তাঁরা জানেন না। কয়েক দিন পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি খাওয়ার পর গতকাল তিনি আড়াই শ গ্রাম পেঁয়াজ ৫৫ টাকা দিয়ে কিনেছেন।