ব্যাংক খাতের দুর্বলতা স্বীকার করা হচ্ছে না: আহসান এইচ মনসুর

আহসান এইচ মনসুর (ফাইল ছবি)।
আহসান এইচ মনসুর (ফাইল ছবি)।

বিভিন্ন ঝুঁকিতে দেশের ব্যাংকিং খাত নাজুক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তারা বলেন, গত ১০ বছরে ব্যাংকের মুনাফা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে আমানত এবং ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা। কিন্তু এসব সমস্যা যথাযথভাবে আমলে নেওয়া বা স্বীকার করা হচ্ছে না।

এ রকম ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত দিয়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বা ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ব্যাংকের মন্দ ঋণ বেড়েছে বিপুল হারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আএমএফ) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, মন্দ ঋণের হার এখন প্রায় ২২ শতাংশ। তবে শেষমেশ সেই আমানতের কারণেই ব্যাংক এখনো টিকে আছে বলে মত দেন তিনি। আমানত যদি ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তাহলে সেই ভরসাও আর থাকবে না। এ ছাড়া অনেক ব্যাংকই এখন চাপের মুখে আছে। স্ট্রেস টেস্টের ফলাফল (ঝুঁকির বিপরীতে সঞ্চিতি) আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অনেক ব্যাংকেরই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে বলে তিনি মনে করেন।

দেশের ব্যাংকগুলো শুধু বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিতে আগ্রহী বলে অভিযোগ করেন বিআইবিএমের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো ব্যাংকিংয়ের আওতার বাইরে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ভাবে, একজনকে দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলে ঝামেলা কমে যায়, বেশি মানুষের কাছে যেতে হয় না, খরচও কমে, সে জন্য ব্যাংকগুলো সহজ পথে হাঁটছে।’ নতুন উদ্যোক্তারা নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ঋণ পান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো মুনাফার একটি অংশ দিয়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে প্রযুক্তিগত বিপ্লবের কারণেও আগামী দিনে প্রথাগত পদ্ধতিতে ব্যাংকিং করা সম্ভব হবে না বলে জানান বক্তারা। তাঁরা বলেন, এটা কেউ চাইলেও হবে, না চাইলেও হবে। পুরো শিল্প বড় ধরনের ঝাঁকুনি খাবে। যারা প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে, সক্ষমতা বাড়াবে, তারাই টিকে থাকবে, আর অন্যরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে।

বক্তাদের অভিমত, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে পুঁজি সংরক্ষণ করতে না পারলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা উচিত।