বাজারে শীতকালীন সবজি এলেও দাম বেশ চড়া

এলাকা ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করেন আল আমিন হোসেন। তাঁর ভ্যানগাড়িতে শীতের আগাম সবজিই বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ভ্যানটি ছিল রাজধানীর কল্যাণপুরের গ্রিলের মোড়ে। সবজি ভ্যানের চারপাশে কয়েকজন ক্রেতা। তাঁদের কাছে আল আমিন মাঝারি আকারের একটি ফুলকপির দাম চাইলেন ৫০ টাকা। সাফ বলে দিলেন, ‘এক দাম’। দর–কষাকষি করা যাবে না।

একটা ফুলকপির এত দাম কেন হবে, তা মানতে পারছিলেন না গৃহিণী সুলতানা বেগম। তিনি বললেন, দুই সপ্তাহ আগেও মাঝারি আকারের ফুলকপির দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। শীতের সবজির দাম এখন কমার কথা। কমার বদলে উল্টো হু হু করে দাম বাড়ছে। কেন বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে এর কোনো যুক্তি খুঁজে পান না তিনি।

কেন ফুলকপির দাম বেশি, এর একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেন আল আমিন। বললেন, মিরপুর-১ নম্বরের পাইকারি বাজার থেকে গতকাল সকালে একেকটা ফুলকপি ৪২ টাকা করে কিনেছেন তিনি। এখন ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করলে তাঁর পোষাবে না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কল্যাণপুর নতুন বাজার এবং কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে শীতকালীন সবজি এলেও দাম বেশ চড়া। টমেটো ১০০ টাকা কেজি। মাঝারি আকৃতির বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা। পেঁয়াজের পাতা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের বাজারও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মাসখানেক ধরে সরু চালের দামও কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়তি। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৩ থেকে ৪ টাকা। ডিমের ডজন এখন ১০৫ টাকা। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দামই বেশ বাড়তি। ফলে বাজারে ক্রেতার জন্য কোনো স্বস্তি নেই।

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নেয়ামতউল্লাহ বলেন, ‘প্রতিদিন বাজারে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। যে পণ্যই কিনি দাম বেশি। যঁাদের আয় নির্দিষ্ট, তঁাদের জন্য এভাবে চলা কষ্টের।’

এই বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা। লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মুলার দামও প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বড় গোল বেগুন ৬০ টাকা। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় নতুন আলুর দাম কিছুটা কমেছে। আগের সপ্তাহে প্রতি কেজি ১০০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল নতুন আলুর কেজি ছিল ৬০ টাকা।

টাউন হল বাজারের সিয়াম স্টোরের বিক্রেতা মো. মামুন বলেন, চালের দাম এই সপ্তাহে নতুন করে আর বাড়েনি। ভালো নাজিরশাইল ৬৫ টাকা, মিনিকেট ৫০ থেকে ৫২ টাকা আর একদম মোটা চাল ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায়। এক বছর আগে এই সময়ে ডিমের ডজন ছিল ৯০ টাকা। বছরের ব্যবধানে মূল্য বেড়েছে ১৬ শতাংশ। গত সপ্তাহের তুলনায় কক জাতের মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন ২৬০ টাকা। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম আগের মতোই ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। মিয়ানমারের একটু ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ২০০ টাকা। আর চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসাবে, গত বছর এ সময়ে পেঁয়াজের কেজি ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকা।

কারওয়ান বাজারে পাল্লা হিসেবে (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন পাইকারি বিক্রেতারা। স্বদেশি বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. ইয়াসিন বললেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। নতুন পেঁয়াজ এখনো বাজারে পুরোপুরি আসতে শুরু করেনি। আগামী সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমতে পারে।