নারী উদ্যোক্তা ঋণ আগের চেয়ে সহজ

নারীদের ঋণ দিতে কিছু ব্যাংকে এখন নারী উদ্যোক্তা ডেস্কও খোলা হয়েছে। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
নারীদের ঋণ দিতে কিছু ব্যাংকে এখন নারী উদ্যোক্তা ডেস্কও খোলা হয়েছে। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এক দশক আগেও নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে সময়ের প্রয়োজনে সেই বাধা দূর হয়ে গেছে। ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে আলাদা সেবা ডেস্ক। আর অন্য যেকোনো ঋণের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নথিপত্র কম লাগছে। তাঁদের জন্য রয়েছে ৯ শতাংশ সুদের পুনঃ অর্থায়ন ঋণ পাওয়ার সুযোগ। যদিও এর বাইরে ঋণ পেতে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে এখনো ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হচ্ছে। উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলো সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬তে বলা হয়েছে, এসএমই খাতে ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃ অর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। তবে গত জুন পর্যন্ত হিসাবে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে গেছে মাত্র ৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ঋণের ৪ শতাংশ গেছে নারীদের কাছে। আলোচ্য সময়ে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ২ হাজার উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ২৯ হাজার ৫৮৭ জন।

 নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো সাদরে আমন্ত্রণ করলেও ঋণ সেভাবে দিচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্ত চাইছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত জামিনদার, স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্র চাইছে ব্যাংকগুলো।

তবে এনআরবি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেওয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের খুঁজছে। সমস্যা হলো, এসএমই খাতে যেসব উদ্যোক্তা আছেন, তার ২ শতাংশ নারী। ফলে সবাই ঋণ পেলেও এসএমই খাতে ঋণের নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি বাড়বে না।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিলে সুদহার ৯ শতাংশ। এর বাইরে যাঁরা পুরোনো গ্রাহক, তাঁরা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন। তবে নতুন ও অনিরাপদ গ্রাহকদের সুদহার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।

ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণের পণ্যভেদে নানা ঋণসেবা নিয়ে এসেছে। আবার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋণ পণ্যসেবাও রয়েছে। বাংলাদেশের সব ব্যাংকই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ পণ্য রয়েছে। এসব ঋণে সুদের হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। যেসব গ্রাহক পুরোনো ও ভালো তারা কিছুটা কম সুদে ঋণ পাচ্ছে। তবে কোনোভাবেই ১১ শতাংশের কম নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণে এগিয়ে রয়েছে ব্র্যাক, ইস্টার্ন ও ইসলামী ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংক এশিয়া, সিটি, আইএফআইসি, যমুনা, ডাচ্‌–বাংলা, মার্কেন্টাইল, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম, পূবালীসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বিশেষ পণ্য রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি খাতের স্টান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি ও সিটিব্যাংক এনএ এ খাতে ঋণ দিতে বিশেষ জোর রয়েছে। আবার এখন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। এর ফলে নারীরা এখন শুধু এসএমই খাতে সীমাবদ্ধ নেই। তাঁদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে বড় ও ভারী শিল্পেও।

তৃণমূল নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠনের (এজিডব্লিউইবি) প্রেসিডেন্ট মৌসুমী ইসলাম বলেন, ব্যাংক থেকে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া কিছুটা সহজ হয়েছে। এখন সময় এসেছে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাত ও ব্যবসা উন্নয়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক চেষ্টা করে যাঁরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য তাঁদের ঋণ দিতে। কারণ, ব্যাংক যে টাকা দেবে, তা তো জনগণের টাকা। তবে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের আবেদন বেশির ভাগ সময়ই পূর্ণাঙ্গ থাকে না।

মাহবুবুর রহমান বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ থাকলে ভালো হতো। তাঁরা কী ব্যবসা করবেন, কীভাবে ঋণ আবেদন করবেন, এসব জানতে পারতেন।