ঢাকায় এক মাসে ১৮ পণ্যের দাম বেড়েছে, কমেছে ৭টির

ঢাকার বাজারে এক মাসে ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, খোলা আটা, খোলা ভোজ্যতেল, সরু দানার মসুর ডাল, আলু ও চিনির মতো পণ্যগুলো। পেঁয়াজ অবশ্য মূল্যবৃদ্ধিতে সবার ওপরে রয়েছে।

এ হিসাব সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। সংস্থাটি নিয়মিত বাজার দরের হিসাব রাখে।

সংস্থাটির গতকাল মঙ্গলবারের তালিকায় দেখা যায়, এক মাসে চাল ৩ থেকে ৯ শতাংশ, খোলা আটা ও ময়দা ৭, খোলা ভোজ্যতেল ২ থেকে ১০, সরু দানার মসুর ডাল ২ থেকে ৭, মুগডাল ৫, আলু ২৩, পেঁয়াজ ৫৪, শুকনা মরিচ ১৬, দেশি রসুন ৬, হলুদ ১৪, জিরা ৭, দারুচিনি ২, এলাচ ২০, ধনে ৬, তেজপাতা ৪, ইলিশ ৭ ও চিনির ২ শতাংশ মূল্য বেড়েছে।

দাম কমেছে ৭টি পণ্যের। এর মধ্যে রয়েছে প্যাকেটজাত আটা ১ শতাংশ, তুরস্কের মসুর ডাল ৪ শতাংশ, অ্যাংকর ডাল ৬ শতাংশ, আমদানি করা রসুন ৩ শতাংশ, লবঙ্গ ৯ শতাংশ, দেশি ও ব্রয়লার মুরগি ৫ থেকে ৬ শতাংশ এবং ডিম ৪ শতাংশ।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাই বেশি। বিশেষ করে চাল, খোলা আটা, খোলা তেল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ভোগাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষকে। কারণ, নিম্ন আয়ের মানুষ খোলা তেল ও খোলা আটা বেশি কেনে। পেঁয়াজ ও রসুন ছাড়া রান্না কঠিন।

যেমন, সেগুনবাগিচায় গৃহকর্মীর কাজ করা সাহেরা আক্তারের বাজার খরচ এখন বাড়তি। গতকাল সেগুনবাগিচা বাজারে কেনাকাটা করে ফেরার পথে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসায় চারজনের সংসারে মাঝারি চাল, খোলা আটা, খোলা সয়াবিন তেল, মোটা মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও সবজি নিয়মিত কিনতে হয়। এর বাইরে তিনি মাছ, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কেনেন। তিনি বলেন, এখন বাজারে পেঁয়াজ, রসুন ও সবজির দাম বেশ চড়া। সম্প্রতি চাল, খোলা আটা ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। তিনি যেহেতু দুটি করে ডিম কেনেন, সেহেতু তাঁকে হালিপ্রতি দাম দিতে হয় ৩৬ টাকা।

সাহেরা আক্তার বলেন, এখন ব্রয়লার মুরগি আর অ্যাংকর ডালই শুধু সস্তা। ১২৫ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি কেনা যায়। আধা কেজি অ্যাংকর ডাল কিনতে পারেন ২০ টাকায়। সাম্প্রতিককালে নিজের ঘরে তিনি গরুর মাংস খাননি।

সেগুনবাগিচার বাজারে ঢুকে দেখা যায়, গরুর মাংস ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে চীনা পেঁয়াজ মিললেও চীনা রসুন ১৬০ টাকা। আর দেশি রসুন ১৯০ টাকা কেজি চাইছেন বিক্রেতারা। চীনা আদাও ১৬০ টাকা কেজি।

টিসিবির হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন পেঁয়াজের দাম ৫৭৩ শতাংশ, রসুন ১৬৭ শতাংশ ও আদা ৩৬ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে এক বছরে দুই অঙ্কের হারে মূল্য বেড়েছে ৮টি পণ্যের। দুই অঙ্কের হারে দাম কমেছে ৪টি পণ্যের।

মোটামুটি সচ্ছল পরিবারগুলো মূলত বোতলজাত তেল, প্যাকেটজাত আটা, সরু চাল, সরু দানার মসুর ডাল কেনে। বাজারে সরু দানার মসুর ডালের দাম ১০ টাকার মতো বেড়েছে। বোতলজাত তেলে লিটারে তিন থেকে চার টাকা দাম বেড়েছে, যা টিসিবির হিসাবে আসেনি। কারণ, কোম্পানিগুলো বোতলে লেখা সর্বোচ্চ খুচরামূল্য পরিবর্তন করেনি। বাজারে খুচরা পর্যায়ে তাদের সরবরাহ করা মূল্য ও সর্বোচ্চ খুচরামূল্যের পার্থক্য লিটারে ৮ থেকে ১০ টাকা।

একইভাবে বিক্রেতারা এক কেজি লবণ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ২৩ থেকে ২৫ টাকায়। যার সর্বোচ্চ খুচরামূল্য লেখা থাকে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। কোম্পানিগুলো বলছে, তারা এটা কমাতে চায়। কিন্তু সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নিয়মিত পর্যালোচনা করা উচিত। প্রতিযোগিতা কমিশন এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে।