চালু হচ্ছে বাধ্যতামূলক প্রবাসী বিমা

বিদেশগামী কর্মীদের জন্য অবশেষে চালু হচ্ছে বাধ্যতামূলক বিমা। দুই বছরের জন্য মাত্র ৪৯০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ২ লাখ টাকার বিমা পলিসি করার সুবিধা পাবেন কর্মীরা। ১৯ ডিসেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পুরো মাত্রায় চালু হবে জানুয়ারি থেকে। প্রাথমিকভাবে বিমা বাস্তবায়নের কাজটি করবে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন।

গত ২৫ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে কর্মীপ্রতি ৫০০ টাকা বিমা প্রিমিয়ার পরিশোধ করা হবে। এটি অনুমোদনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জরুরি বোর্ড সভা ডেকেছে সংস্থাটি। আগামী সপ্তাহে সাধারণ বিমার সঙ্গে এই সংস্থার চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র বলছে, বিদেশগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে জীবন বিমা পলিসি গ্রহণ বাধ্যতামূলক বলে বিবেচিত হবে। বিদেশগামী কর্মীদের ছাড়পত্রের জন্য প্রদেয় অন্যান্য ফির সঙ্গে প্রযোজ্য বিমা প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। তবে দুটি বিমা পরিকল্পের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারবেন কর্মীরা।

এর আগে গত ১৪ অক্টোবর ‘প্রবাসী কর্মী বিমা নীতিমালা’ নামে একটি নীতিমালা জারি করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নীতিমালাটি করা হয়েছে ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সীদের জন্য। প্রথম দফায় প্রথমবার বিদেশগামী কর্মীদের এই সেবার আওতায় আনার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। বয়সভেদে প্রিমিয়ামের হার কমবেশি হয়ে থাকলেও প্রবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে একই প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে। পলিসি হবে দুই ধরনের—দুই লাখ ও পাঁচ লাখ টাকার। পলিসির মেয়াদ দুই বছর। তবে বিদেশে অবস্থানকালে নিজ অর্থায়নে আরও দুই বছরের জন্য পলিসি নবায়ন করার সুযোগ থাকছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২ লাখ টাকার পলিসির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ৯৯০ টাকা। আর ৫ লাখ টাকার পলিসির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ২ হাজার ৪৭৫ টাকা। উভয় পলিসির ক্ষেত্রেই সরকার দেবে ৫০০ টাকা। ৯৯০ টাকা প্রিমিয়ামের মধ্যে বিমাগ্রহীতাকে দিতে হবে ৪৯০ টাকা। আর অন্যটিতে বিমা গ্রহীতাকে দিতে হবে ১ হাজার ৯৭৫ টাকা।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পলিসি কার্যকর থাকা অবস্থায় বিমা গ্রহণকারী মারা গেলে তাঁর বৈধ উত্তরাধিকারী বিমার টাকা পাবেন। তবে আত্মহত্যা, এইচআইভি বা এইডসের কারণে মৃত্যু, মাদকাসক্তি, যুদ্ধ বা গুরুতর আইন লঙ্ঘনের কারণে মৃত্যুদণ্ড হলে এই টাকা দেওয়া হবে না। বিমা মেয়াদের মধ্যে কোনো কর্মী আহত হয়ে পরবর্তী সময়ে ৯০ দিনের মধ্যে মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীকে মূল বিমা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করা হবে। তবে বিমাগ্রহীতা দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী, সম্পূর্ণ বা আংশিক অক্ষমতার জন্য কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকলে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ডের অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহে জীবন বীমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে। জানুয়ারি থেকে এটি পুরোপুরি কার্যকর হয়ে যাবে।

জানা গেছে, বিমা সেবাটি চালু হওয়ার পর জীবন বীমা করপোরেশন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ ব্যবস্থার সার্বিক পর্যালোচনা করবে। সংস্থাটি ৯ মাস পর বিমাগ্রহীতার সংখ্যা, বিমা অঙ্ক, বিমা দাবির সংখ্যা, বিমা দাবি নিষ্পত্তির সংখ্যাসহ পুরো ব্যবস্থার কার্যকারিতা তুলে ধরবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে। মন্ত্রণালয় পরে তা পর্যালোচনা করবে।