এনবিআরের লক্ষ্য অর্জন যেন 'সোনার হরিণ'

এনবিআর
এনবিআর

চলতি এসএ গেমসের ফুটবলে সোনার পদক পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নেপালে গেছে বাংলাদেশ দল। এবারের এসএ গেমস ফুটবলে শক্তিশালী ভারত ও পাকিস্তান নেই। আফগানিস্তান ফুটবল দলও এখন আর এসএ গেমসে খেলে না। এই অবস্থায় জামাল ভূঁইয়াদের মতো খেলোয়াড়েরা দলে থাকলে সোনার পদক জয়ের আশা করাই যায়। কিন্তু প্রথম দুটি ম্যাচে জিততে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল দল। এর মধ্যে ভুটানের সঙ্গে হেরেছে, আর মালদ্বীপের সঙ্গে ড্র করেছে। পরিণতিতে ফাইনালে ওঠা নিয়ে এখন শঙ্কায় আছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ফুটবল দলের মতোই যেন অবস্থা এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এই সময়ে আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট—কোনো খাতেই এনবিআর লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ফুটবলের মতো রাজস্ব আদায়েও ‘সোনার পদক’ অর্জনের লক্ষ্য যেন এনবিআরের কাছে অনেকটা সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরকে সার্বিকভাবে প্রায় ৪৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। অথচ চার মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশের কিছুটা বেশি। বিশেষ করে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি নেই বললেই চলে।

চলতি অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন চালু হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল, ভ্যাট আদায়ে বেশ গতি আসবে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যা ভ্যাট আদায় বাড়াতে পারেনি।

চলতি অর্থবছরে সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই বাজেট বাস্তবায়নে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে।

>

অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গতকাল বুধবার বলেন, রাজস্ব আদায়ের ঘাটতিতে অর্থনীতির শ্লথগতির প্রতিফলন ঘটছে। আবার নতুন ভ্যাট আইন যেভাবে শুরু করার কথা ছিল, তা হয়নি। চলতি অর্থবছরে কোনোভাবে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। বড় ধরনের ঘাটতি হবে। ফলে ৭-৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও হবে না।

আদায় পরিস্থিতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এই সময়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি হয়েছে ২০ হাজার ২২০ কোটি টাকা।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যের চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এ খাতে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, লক্ষ্য ছিল ৩৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। তবে চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের কিছুটা বেশি।প্রথম তিন মাসে অবশ্য নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন আইনে ইবিআইএন ছাড়া ভ্যাট দেওয়া যায় না। কিন্তু ওয়েবসাইটে গিয়ে এই নিবন্ধন নিতে পারছেন না অনেক ইবিআইএনপ্রত্যাশী। ইবিআইএন পেতে অনেককে ভ্যাট কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে। ভ্যাট দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো ব্যবসায়ীরা রপ্ত করতে পারেননি। নানা বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে এনবিআরের কাছে।

আমদানি ও রপ্তানিতে জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে শুল্ক আদায়ে প্রবৃদ্ধি নেই। প্রথম চার মাসে গতবারের সমান রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই খাতে চার মাসের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি, ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই সময়ে ২৮ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।

আয়কর খাতে জুলাই-অক্টোবর সময়ে আয়করে লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। এই খাতে ২৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। আয়করে প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশের বেশি।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের সদস্য কানন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, আয়করে প্রবৃদ্ধি আরও হবে। কর বিভাগ ইতিমধ্যে কিছু নীতি নিয়েছে। যেমন রাজধানীতে কমপক্ষে ২০ লাখ বিদ্যুৎ মিটার আছে। এর মধ্যে অন্তত ১৫ লাখ সম্ভাবনাময় করদাতা পাওয়া যাবে। ঢাকা শহরে যাঁদের একটি ফ্ল্যাট আছে, তাঁদের বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা নেই, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আয়কর বিভাগের মতো শুল্ক এবং ভ্যাট বিভাগও বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করবে।