চট্টগ্রামের চা নিলামে শীর্ষে

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নিলামে চায়ের দামে আবারও শীর্ষস্থানে উঠে এল চট্টগ্রামের বাগান। একটানা দুই নিলামবর্ষে শীর্ষস্থানে থাকা সিলেটের হবিগঞ্জের মধুপুর চা–বাগানকে হটিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের বাগান। এখন শীর্ষস্থানে ফটিকছড়ির ভূজপুরের কৈয়াছড়া ডলু চা–বাগান। ২০১৯–২০ নিলামবর্ষে অনুষ্ঠিত ২৯টি নিলামে চা বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। নিলামে ১৬৭টি বাগান থেকে উত্তোলিত চা প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি হয়।

নিলামে এখন পর্যন্ত ফটিকছড়ির কৈয়াছড়া ডলু চা–বাগানের ৫ লাখ ৬৬ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। এসব চায়ের গড় বিক্রয়মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২৯৭ টাকা ২৫ পয়সা। এ পর্যন্ত সব কটি বাগানের নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ের গড়মূল্য ছিল ১৯৬ টাকা। এ হিসাবে কৈয়াছড়া বাগানের চা গড় বিক্রয়মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০১ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।

কৈয়াছড়া বাগানটির মালিকানা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের। ব্র্যাকের চা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল কুদ্দুস শেখ গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, চায়ের দাম নির্ভর করে চায়ের মানের ওপর। এই বাগানের চায়ের মান ভালো ছিল বলেই নিলামে ক্রেতারা বেশি দামে কিনে নিয়েছেন। চা–পাতা উত্তোলন থেকে শুরু করে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই মানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তাতেই সেরা দাম পাওয়া গেছে।

>সেরা পাঁচে তিনটি বাগান চট্টগ্রামের
প্রথম ফটিকছড়ির কৈয়াছড়া ডলু, চতুর্থ ফটিকছড়ির কর্ণফুলী ও পঞ্চম বাঁশখালীর চাঁদপুর–বেলগাঁও

বাগান পরিচালনাকারীরা জানান, কৈয়াছড়া চা–বাগানটি প্রায় শতবর্ষী। পরিত্যক্ত থাকা অবস্থায় ১৯৬৩ সালে বাগানটিতে উৎপাদন শুরু হয়। নানা কোম্পানি ঘুরে ব্র্যাকের হাতে আসে ১৯৯৩ সালে। এরপর বাগানটিতে চা উৎপাদন ও মানে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৬–১৭ নিলামবর্ষেও চা–বাগানটির উৎপাদিত চায়ের গড়মূল্য ছিল অন্যসব বাগানের চেয়ে বেশি। চা বিক্রির গড় দরে প্রতিবছরই শীর্ষ পাঁচের মধ্যে অবস্থান রয়েছে বাগানটির।

চা বেচাকেনার নিয়মানুযায়ী, বাগান থেকে চা–পাতা উত্তোলন করে কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে মিহি দানা, মোটা দানাসহ নানা রকমের চা তৈরি করা হয়। এরপর এই চায়ের নমুনা পাঠানো হয় ব্রোকারেজ হাউসে। প্রতি সপ্তাহে এক দিন চট্টগ্রামে বা সিলেটের নিলাম কেন্দ্রে তা নিলামে তোলা হয়। সেখানে সর্বোচ্চ দরদাতাকারীর কাছে চা বিক্রি করা হয়। চায়ের দাম ও রাজস্ব পরিশোধ করে এই চা সংগ্রহ করেন নিলামের ক্রেতারা।

গড় বিক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে ৩০টি সেরা বাগানের চায়ের তালিকা প্রকাশ করেছে চা বেচাকেনার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্স লিমিটেড। এই তালিকায় দেখা যায়, সেরা পাঁচটি বাগানের মধ্যে তিনটিই পড়েছে চট্টগ্রামে। শীর্ষস্থানে থাকা কৈয়াছড়া চা–বাগান ছাড়াও অপর দুটি চা–বাগান হলো ফটিকছড়িতে ব্র্যাকের কর্ণফুলী ও বাঁশখালীতে সিটি গ্রুপের চাঁদপুর–বেলগাঁও চা–বাগান। কর্ণফুলী বাগানের চায়ের গড় বিক্রয়মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২৬৬ টাকা। চলতি নিলামবর্ষের ২৯টি নিলামে এই বাগানের ১৩ লাখ ৬৭ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। পঞ্চম অবস্থানে থাকা চাঁদপুর বেলাগাঁও বাগানের চা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২৫৮ টাকা ৪৯ পয়সা দরে। এই পর্যন্ত বাগানটির ২ লাখ ৫ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে।

চট্টগ্রামের বাগান ছাড়া গড় দরে সেরা পাঁচে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মৌলভীবাজারের ক্লিভডন বাগানের চা। এইচআরসির এই বাগানের চা এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নিলামে গড়মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২৯২ দশমিক ৮৬ টাকা। মোট বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার কেজি চা। গত নিলামবর্ষে শীর্ষস্থানে থাকা হবিগঞ্জের মধুপুর বাগানের চা এবার নেমেছে তৃতীয় অবস্থানে। বাগানটির চায়ের গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ২৮৫ টাকা। বাগানটি থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৯ হাজার কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়েছে।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৬৭টি বাগানের ২১টি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি চা–বাগান সিলেট বিভাগে। বিভাগটির মৌলভীবাজার জেলায় ৯১ টি, হবিগঞ্জ জেলায় ২৫টি এবং সিলেট জেলায় ১৯টি চা–বাগান রয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে আটটি, রাঙামাটিতে একটি এবং ঠাকুরগাঁওতে একটি চা–বাগান রয়েছে।