পণ্যের ন্যায্যমূল্য বলে কিছু আছে?

টাকা। প্রতীকী ছবি
টাকা। প্রতীকী ছবি

পণ্যমূল্য নিয়ে সব সময়ই মানুষের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ দেখা যায়। অনেক সময়ই ক্রেতারা অভিযোগ করেন, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না; ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন, ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট কাটছেন ইত্যাদি। কিন্তু বিদ্যমান অর্থনীতির তত্ত্বে ন্যায্যমূল্য বলে বাস্তবে কিছু নেই। পণ্যের দাম আদতে বাজারের দাম কিছু নয়, অর্থাৎ যে দামটা মানুষ দিতে চায়।

বাজার অর্থনীতিবিদদের কাছে পণ্যমূল্যের নৈতিক মানদণ্ড বলে কিছু নেই। দাম ব্যাপারটা স্রেফ বাজারের সরবরাহ ও চাহিদার ব্যাপার। যে ব্যবসায়ীরা দাম বেশি রাখছেন, তাঁরা বাস্তবে দামটা চূড়ান্ত সীমার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপারটা হলো, ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দাম যদি ক্রেতারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলে তাঁরা দাম কমাতে বাধ্য হবেন। বাজার অর্থনীতিবিদেরা বলেন, বাজারই পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে থাকে। দাম নির্ধারণের আর কোনো পথ নেই। এমনকি সোনারও অন্তর্নিহিত দাম নেই।

বাজার নিয়ে পৃথিবীর অন্যতম প্রথম গবেষণাটি করেছিলেন ইতালির পণ্ডিত টমাস অ্যাকুইনাস। সুমা থিওলজিকা শীর্ষক গ্রন্থে তিনি অবশ্য বলেছিলেন, বাজার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করতে পারে না। তিনি ছিলেন সন্ন্যাসী। ফলে বাজার অর্থনীতিবিদদের মতো করে তিনি ভাববেন না, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁর কাছে পণ্যমূল্য গভীরভাবে নৈতিক বিষয় ছিল। ধনতৃষ্ণা তাঁর কাছে ছিল মহাপাপ। আবার একই সঙ্গে তিনি এও বুঝতেন যে বণিক যদি ব্যবসা থেকে মুনাফা করতে না-ও পারে, তাহলে সে ব্যবসা করার প্রণোদনা হারিয়ে ফেলবে। ফলে সমাজও প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে বিচ্যুত হবে।

অ্যাকুইনাসের উপসংহার ছিল এ রকম: ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্য আরোপ করেই সেখান থেকে শোভন মুনাফা করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় তাঁরা অতিরিক্ত মুনাফা না-ও করতে পারেন। কারণ, সেটা পাপ। এই ন্যায্যমূল্য আর কিছু নয়, ক্রেতা যে দামটা দিতে রাজি হন, ঠিক সেটাই। তবে ব্যবসায়ী আবার ক্রেতাকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না-ও জানাতে পারেন। যেমন, আগামী সপ্তাহেই মসলার বড় একটা চালান আসছে, তাতে দাম কমে যেতে পারে।

বাজার অর্থনীতিবিদেরা যা-ই বলুন না কেন, পণ্যমূল্যের সঙ্গে ন্যায্যতার ব্যাপারটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। পত্রিকার পাতায় প্রায়ই শিরোনাম হয়: ধান্যের ন্যায্যমূল্য পেলেই কৃষক টিকে থাকবেন অথবা চাষিরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে ধান বা চালের চাহিদা কম না থাকলেও চাষিরা বরাবরই বঞ্চিত হন। ফলে আমাদের মতো দেশে বাজার পরিপূর্ণ নয়, সে কথা ধরে নেওয়াই যায়।

মার্ক্সবাদীরা তো বাজারের তত্ত্বেই বিশ্বাস করেন না। তবে অন্যদিকে জোসেফ স্টিগলিৎস ও পল ক্রুগম্যানের মতো অর্থনীতিবিদেরা বলে থাকেন, বাজারের অদৃশ্য হাত নেই। বাজার নিজে থেকে সব সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সেখানে কিছুটা হলেও সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।