বাজেটের পর থেকে ব্যবসা খারাপ

মানোয়ার হোসেন
মানোয়ার হোসেন

প্রথম আলো: ইস্পাত খাতের ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?

মানোয়ার হোসেন: বাজেটের পর থেকে ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন সময় পার করছে ইস্পাত খাত। কারণ হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ইস্পাত খাতে ৬০০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছিল। খুচরা পর্যায়ে ভ্যাটের হার প্রতি টনে ২০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৩০০ টাকা হয়ে যায়। কাজটি একেবারেই না ভেবে করা হয়েছিল। একজন খুচরা বিক্রেতা টনপ্রতি রডে মুনাফাই করেন ২০০–৩০০ টাকা। সেখানে ৩ হাজার ৩০০ টাকা ভ্যাট আরোপ করা অযৌক্তিক। কেউই হিসাব মেলাতে পারছিলেন না। সরকার একপর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫০০ টাকায় নামিয়ে আনল। এখনো হারটি বেশি হলেও আমি বলব, এটি একধরনের সংশোধন। তবে সংশোধন করতে গিয়ে এত সময় নেওয়া হয়েছে যে ততক্ষণে ব্যবসা তলানিতে চলে গেছে। ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগছে। যেকোনো জিনিস বন্ধ করে আবার চালু করতে গেলে সময় লাগে। আরেকটা যেটি হচ্ছে, নতুন ভ্যাট আইনে খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা খুব একটা স্বচ্ছন্দবোধ করছেন না। সঙ্গে যোগ হয়েছে এনবিআরের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের দোকানে দোকানে গিয়ে কাগজ তল্লাশি। তাতে খুচরা ব্যবসায়ীরা ভয় পাচ্ছেন। ইস্পাতের ব্যবসা খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ফলে ব্যবসায়ীরা কেউ এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অযথা বিতর্কে যেতে পছন্দ করছেন না। বিষয়টি অনেকটা দুই টাকার ব্যবসা নিয়ে দশ টাকার মাথাব্যথা নেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। বাজেটের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশোধনী দিল। তার মানে, তারা ভুল করেছিল। এভাবে কোনো কিছু না ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে ভাবনাচিন্তা করে নেওয়া ভালো। আমাদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারতেন কর্মকর্তারা। গত তিন–চার মাসে যে লোকসান হলো, সেটি এক বছরে কাভার করা যাবে না।

প্রথম আলো: ইস্পাত খাতে ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

মানোয়ার হোসেন: বাংলাদেশের প্রতিটি শিল্পেই চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি আছে। এটি থাকবেই। আমাদের উদ্যোক্তারা অনেক সময় না ভেবেই কারখানার স্থাপন কিংবা সম্প্রসারণ করেন। সে যা–ই হোক, আমাদের দেশের ইস্পাতের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। বর্তমানে ইস্পাতের বার্ষিক চাহিদা ৫৬ লাখ টন। আশা করছি, ২০২৫ সালের মধ্যে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫–৮০ লাখ টন হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যৌক্তিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে। অন্যথায় টিকে থাকা যাবে না।

প্রথম আলো: ইস্পাত খাতে একাধিক বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। বিষয়টি নিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তারা বেশ চিন্তিত। কেন?

মানোয়ার হোসেন: একসময় আমাদের আনোয়ার গ্রুপের কারখানায় মাসে ইস্পাতের উৎপাদন ছিল ৩০০ টন। ২০২০ সালের মধ্যে সেটি বেড়ে ৩০ হাজার টন হবে। আমরা উদ্যোক্তারা কিন্তু ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। এখন ৫০ লাখ টন সক্ষমতার কোনো বিদেশি কারখানা এলে দেশীয় উদ্যোক্তারা একজনও টিকে থাকতে পারবেন না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সেখানে বিদেশি কোম্পানি যদি আমাদের মার দিয়ে চলে যায়, তাহলে সেটি খুবই অন্যায্য হবে।

প্রথম আলো: বর্তমানে ইস্পাত খাতের সমস্যা কী?

মানোয়ার হোসেন: অনেক ধরনের সমস্যা আছে। অবকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে নতুন করে বলতে চাই না। নতুন করে যে সমস্যা শুরু হবে সেটি হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে যে হারে তারল্যসংকট প্রকট হচ্ছে, তাতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ব্যাংকগুলো অতি সতর্ক হয়ে গেছে। বলতে গেলে, তারা কোনো উদ্যোক্তাকে ঋণ দিতে চাচ্ছে না। এমনটি চলতে থাকলে ব্যবসার গতিটা থমকে যাবে। আমার মনে হচ্ছে, আগামী বছর ব্যবসায়ীদের জন্য এটিই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।

মানোয়ার হোসেন
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ)
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আনোয়ার গ্রুপ

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শুভংকর কর্মকার