সোনা আমদানির সনদের আশায় গচ্চা জামানত

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

সিলেটের অনুপ স্বর্ণ শিল্পালয়ের কর্ণধার তুষার কান্তি ভট্টাচার্য ৫ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য জামানত দিয়ে সোনার আমদানির ডিলার লাইসেন্সের বা সনদের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ডিলার লাইসেন্স পাননি, উল্টো গচ্চা ৫ লাখ টাকা। তাতেই মাথায় হাত তাঁর। কারণ স্বল্প পুঁজি তাঁর। লাইসেন্স পাবেন সেই আশায় ওই পুঁজির টাকায় আবেদন করেছিলেন।

সিলেটের তুষারের মতো একই অবস্থা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৯ প্রতিষ্ঠানের। ডিলার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে দুকুলই হারিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এসব প্রতিষ্ঠান। সোনা আমদানির লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছিল ৪৭টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি ব্যাংকসহ ১৮ প্রতিষ্ঠানকে ডিলারশিপ লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বাকি ২৯টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পায়নি। এসব প্রতিষ্ঠান এখন জামানত বাবদ জমা দেওয়া টাকা ফেরত চায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো উত্তর দিতে পারছেন না।

জানতে চাইলে অনুপ স্বর্ণ শিল্পালয়ের কর্ণধার তুষার কান্তি ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা জামানত দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। লাইসেন্সও পেলাম না, টাকাও গেল। ফলে এখন বিপদেই পড়েছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে সোনা আমদানির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা ২৯ প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আটকে আছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সোনা আমদানির ডিলার নিয়োগের জন্য যে আবেদন আহ্বান করেছিল, তাতে বলা ছিল লাইসেন্স ফি বাবদ জমা দেওয়া ৫ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য। এখন আবেদন করেও লাইসেন্স না পেয়ে সমস্যায় পড়া ব্যবসায়ীদের ওই টাকা আটকে গেছে ‘অফেরতযোগ্য’ শর্তের কারণেই।

আবেদন করেও লাইসেন্স না পাওয়া রিজভী অ্যান্ড মালিহা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো সোনা আমদানির লাইসেন্স দিচ্ছে, এটা দেখে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি লাইসেন্সও পেলাম না, টাকাও আটকে গেছে।’

>

সোনা আমদানির অনুমতি
৫ লাখ টাকা জামানত দিয়ে ৪৭ প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল
পেয়েছে ১৮ টি, ২৯ টিরই জামানত গচ্চা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবেদনের শর্তেই বলা হয়েছিল জামানতের টাকা অফেরতযোগ্য। সেই শর্ত মেনেই প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করেছিল। তাই এখন জামানত ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।’ তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘প্রথম ধাপে ১৮ প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেসব বিবেচনায় ১৮টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়েছে সেসব বিবেচনায় পিছিয়ে ছিল বাকি ২৯টি প্রতিষ্ঠান। তবে ভবিষ্যতে যখন আবারও নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হবে তখন আগের আবেদনগুলোও বিবেচনায় থাকবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১১ মার্চ সোনা আমদানির ডিলার নিয়োগে আবেদন আহ্বান করে। সে অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে আবেদন নেওয়া হয়। সোনার ব্যবসায় সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর সোনা নীতিমালা করে। সেই নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে সোনা আমদানির সুযোগ দিতে ডিলার লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ নেয়। আবেদনকারী ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে একটি ব্যাংকসহ ১৮ প্রতিষ্ঠানকে ডিলারশিপ লাইসেন্স দেওয়া হয়। প্রতিটিকে দুই বছরের জন্য এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে সোনা আমদানিতে প্রতি পদে পদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলাদা অনুমোদন নিতে হবে।

লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মধুমতি ব্যাংক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, জুয়েলারি হাউস, রতনা গোল্ড, অরোসা গোল্ড করপোরেশন, আমিন জুয়েলার্স, শ্রীজা গোল্ড প্যালেস লিমিটেড, জরোয়া হাউস লিমিটেড, মিলন বাজার, এসকিউ ট্রেডিং, এমকে ইন্টারন্যাশনাল, আমিন জুয়েলার্স, বুরাক কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ, গোল্ডেন ওয়ার্ল্ড জুয়েলার্স, রিয়া জুয়েলার্স, লক্ষ্মী জুয়েলার্স, বিডেক্স গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড ও ডি ডামাস দ্য আর্ট অব গ্যালারি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ থেকে ৪০ টন সোনা লাগে, যার বড় অংশই আসে বিদেশফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের আনা সোনা থেকে। এ ছাড়া কিছুটা আমদানি হয় এবং পুরোনো সোনা গলিয়েও চাহিদা মেটানো হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুত সোনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন না। আবার জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীরা সোনা আমদানি করেন না। এমন অবস্থায়ই লাইসেন্স প্রদানের উদ্যোগ নেয়কেন্দ্রীয় ব্যাংক।