ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই

বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। বোতলজাত তেলের দাম এক দফা বাড়ানোর পর আবারও বাড়ার পথে রয়েছে কোম্পানিগুলো। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জানিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে মিলমালিকদের সমিতি।

দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর যুক্তি হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। এ ছাড়া বাজেটে কর আরোপ ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকেও দায়ী করছে তারা।

বাজারে এখন এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৮৬ থেকে ৯০ টাকা চাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা, যা এক মাস আগের তুলনায় লিটারে ৬ টাকার মতো বেশি। অন্য দিকে পাম সুপার তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর এই ঘটনা ঘটছে অনেকটা নীরবে। কারণ, কোম্পানিগুলো বোতলের মোড়কে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) পরিবর্তন করছে না। ফলে সরকারের হিসাবে মূল্যবৃদ্ধির হিসাব আসছে না।

বিশ্ববাজারে দামসহ নানা কারণে দেশে সয়াবিন তেলের দাম এত দিন বেশ কম ছিল। কিন্তু কোম্পানি বোতলের মোড়কে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে কোনো পরিবর্তন করেনি। এতে একজন খুচরা বিক্রেতা লিটারে ৮ থেকে ১০ টাকা মুনাফার সুযোগ পেতেন। সেটাই কমিয়েছে কোম্পানিগুলো।

বাজারে এখন পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) কোম্পানিভেদে ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকা। যে তেলের বোতলের এমআরপি ৫০০ টাকা, সেটা খুচরা বিক্রেতারা ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকায় কিনতে পারেন। আর যে কোম্পানির ৫ লিটারের বোতলের দর ৫৩০ টাকা, তা খুচরা বিক্রেতারা ৪৯৫ টাকায় কিনতে পারেন।

ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বাজেটে তেলের ওপর অগ্রিম কর ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করার ফলে তেলের দাম বাড়ে। কিন্তু তখন কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়ায়নি। এখন অপরিশোধিত তেল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।

তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেড়ে ১ লিটারের বোতলের দাম হবে ১১০ টাকা। ৫ লিটারের দাম হবে ৫৪০ টাকা।

দেশে বছরে ১৪ লাখ টনের মতো ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। দেশের বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজারে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা, গ্লোবসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরা খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি করে। আবার বোতলজাত করেও বিক্রি করে।

>

এক মাসে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ৬ টাকার মতো
পাম সুপার বেড়েছে ১০ টাকা
বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানি।

নিম্ন আয়ের ও গ্রামের মানুষ সাধারণত খোলা তেল ব্যবহার করে। ঢাকার সাধারণ খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ খোলা তেলের বড় ক্রেতা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পাম তেলের ব্যবহার বেশি। সব ক্ষেত্রেই খরচ বাড়ছে।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, পাইকারি বাজারেও খোলা তেলের দাম বেশ বেড়েছে। প্রতি মণ খোলা সয়াবিন ৩ হাজার ৩০০ টাকায় উঠেছে। এক মাসে মূল্যবৃদ্ধি ২০০ টাকা, যা কেজিতে ৫ টাকার বেশি দাঁড়ায়। আর লিটারে ১০ টাকার মতো বেড়ে পাম তেলের দাম ৭২ টাকা।

ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববাজারে এক মাসে অপরিশোধিত পাম তেলের দাম ১০ শতাংশ ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১১ শতাংশের মতো বেড়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ কমিশন তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি তিন দফা বৈঠক করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ভোজ্যতেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে। আমরা ভ্যাট তিন পর্যায়ের বদলে এক পর্যায়ে পুরোটা দিতে চাই। এসব বিষয় নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’