আমদানি শুরু হলে সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার টাকা কমবে

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি
>

সোনা আমদানির ডিলারশিপ লাইসেন্স পেয়েছে ১৮ ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান। আবেদন করেও লাইসেন্স পায়নি ২৯ প্রতিষ্ঠান। জামানত হিসেবে তাদের দেওয়া ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আটকে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। কয়েক মাস ধরেই সোনার বাজারও অস্থির। আমদানি শুরু হলে কি দাম কমবে? এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার

প্রথম আলো: সোনা আমদানির লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছিল ৪৭টি প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ১টি ব্যাংকসহ ১৮ প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়েছে। আমদানির প্রক্রিয়া কি শুরু হয়েছে?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: সোনা আমদানির প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো দূর করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছি। বর্তমানে ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী বিদেশ থেকে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালংকার বিনা শুল্কে আনা যায়। আর ২০ ভরি পর্যন্ত সোনার বার আনা যায়, সে জন্য শুল্ক দিতে হয় ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা। তবে বাণিজ্যিকভাবে আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে গিয়ে আমরা দেখলাম, সোনার বার আনতে ভরিতে ২ হাজার ৮০০ টাকা শুল্ক ও কর দিতে হবে। অন্যদিকে অলংকার আনলে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক ও কর দিতে হবে। তাতে অলংকারের দাম পড়ে যাবে ৯০ হাজার টাকা। এই পরিমাণ শুল্ক ও কর দিতে হলে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা আপাতত ব্যাগেজ রুলসের মতো বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানিতে একই হারে শুল্ক ও কর নির্ধারণের জন্য এনবিআরে আবেদন করেছি। অন্যদিকে সোনা আমদানির জন্য প্রতিটি ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সেটির জন্য আবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তার ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। তবে প্রতিটি ঋণপত্রের বদলে প্রতি চালানের জন্য অনুমতি নেওয়ার বিধান করলে প্রক্রিয়াটি সহজ হয়। সে জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছি। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি শুরু হলে যেন ব্যাগেজ রুলসের আওতায় বিদেশ থেকে সোনা আমদানি বন্ধ করা হয়, সে জন্য আমরা আরেকটি আবেদন করব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। কারণ, বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি হলে সেটির দরকার পড়বে না।

প্রথম আলো: ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সোনা ও অলংকার আনতে দেওয়া না হলে তো প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সবাই তো আর ব্যবসা করেন না। অনেকেই আত্মীয়স্বজনের জন্য অলংকার নিয়ে আসেন।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: আমরা শুধু সোনার বার আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাইব। কারণ, বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হলে সেটির আর দরকার হবে না। তবে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার অলংকার আনার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রথম আলো: আপনার প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড তো লাইসেন্স পেয়েছে। আপনারা কি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: আমরা এরই মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। চলতি মাসের শেষের দিকে হয়তো ঋণপত্র খুলব। আশা করছি, আগামী মাসেই প্রথম চালান দেশে আসবে।

প্রথম আলো: বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি হলে দাম কি কমবে?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: ব্যাগেজ রুলসের মতো শুল্ক ও কর নির্ধারণ করা হলে ভরিপ্রতি সোনার দাম ৩ হাজার টাকা কমবে।

প্রথম আলো: সেটির সুফল কি সাধারণ মানুষ পাবে?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: অবশ্যই পাবে। আমদানি শুরু হলে দেশের মানুষ আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে সোনা কিনতে পারবেন। বর্তমানে জুয়েলার্স সমিতি ১৫-২০ দিন পর পর বিশ্ববাজারের দর ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটে সরবরাহ পরিস্থিতি দেখে সোনার দর বৃদ্ধি-হ্রাস করে। আমদানি শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিদিন দর নির্ধারণ করা হবে।

প্রথম আলো: প্রতিদিন সোনার দর নির্ধারণের জন্য আপনারা কি কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছেন?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: আমরা ইতিমধ্যে সেই ব্যবস্থা করেছি।

প্রথম আলো: যারা সোনা আমদানি করবে, তাদের তদারকির কোনো ব্যবস্থা কি থাকছে?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি গোল্ড তথ্যভান্ডার কেন্দ্র থাকবে। সেখানে প্রতিটি সংস্থার লোকজন থাকবেন। জুয়েলার্স সমিতি থেকে আমি থাকব। সেই কেন্দ্রের কাজ হবে সোনা আমদানি থেকে বিক্রিসহ পুরো প্রক্রিয়াটি তদারক করা।

প্রথম আলো: আবেদন করেও সোনা আমদানির লাইসেন্স পায়নি ২৯টি প্রতিষ্ঠান। আবেদনের সময় তারা ৫ লাখ টাকা করে জামানত দিয়েছে। সেটি ছিল অফেরতযোগ্য। তবে লাইসেন্স না পাওয়ায় তারা সেই টাকা ফেরত চায়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, প্রথম পর্যায়ে ১৮ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে আরও লাইসেন্স দেওয়া হবে। তখন বাকি ২৯ প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হবে। তবে তার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শর্ত অনুযায়ী ভল্ট স্থাপনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রথম আলো: বেশ কয়েক মাস ধরেই সোনার বাজার অস্থির। প্রতি ভরি সোনার দাম ৬০ হাজার টাকার কাছাকাছি। দাম এত বেশি কেন? এমন অবস্থায় আপনাদের ব্যবসা কেমন চলছে?

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা: চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ডলারের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট নিয়ে অস্থিরতা আছে। দেশটিতে আবার নতুন নেতৃত্ব এসেছেন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা সোনার ওপর ঝুঁকেছে। দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় সোনার চাহিদা কিছুটা কমেছে। তবে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের মৌসুম হওয়ায় বেচাকেনা মোটামুটি চলছে।