সোনালী ব্যাংক: প্রবাসী আয়ে ৪৪ কোটি টাকা ক্ষতি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সোনালী ব্যাংকের পক্ষে সৌদি আরব ও কুয়েতের চারটি এক্সচেঞ্জ হাউস প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করত। প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্তা পেয়ে দেশে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে সেই পরিমাণ রেমিট্যান্স পৌঁছে দিত সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো। কিন্তু সৌদি ও কুয়েতের চার প্রতিষ্ঠান ১৫ বছরেও সেই অর্থ সোনালী ব্যাংককে দেয়নি। এখন এসব রেমিট্যান্স হাউসের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ৪৪ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটি।

এক্সচেঞ্জ হাউস চারটি হলো—সৌদি আরবের আলরাজি কমার্শিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ ও আল মোসা এক্সচেঞ্জ এবং কুয়েতের ন্যাশনাল মানি এক্সচেঞ্জ ও কুয়েত ওভারসিজ এক্সচেঞ্জ।

আশ্চর্যজনক হলো, সোনালী ব্যাংক ১৫ বছরেও বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানায়নি। তবে ব্যাংকটির বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনার সুবাদে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জেনে গেছে। সে জন্য সোনালী ব্যাংককে ৪৪ কোটি টাকার নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুনাফা থেকে এ পরিমাণ টাকা সঞ্চিতি রাখতে হবে সোনালী ব্যাংককে।

যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘সোনালী ব্যাংককে অনেক প্রভিশন রাখতে হয়, তাই এটা রাখা হয়েছে কি না তা জানি না।’

সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক ব্যবসা, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আনয়ন, লন্ডনের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি সভা হয়েছে। ওই সভাতেই চার এক্সচেঞ্জ হাউসের বিষয় উঠে এসেছে।

>

প্রবাসী আয়ের অর্থ নিয়ে সৌদি আরব ও কুয়েতের চারটি এক্সচেঞ্জ হাউস লাপাত্তা। ১৫ বছরেও তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানায়নি সোনালী ব্যাংক।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রেমিট্যান্স খাতে যে ৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, তা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করতে হবে। সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক শামীমুল হক জানান, পাওনা আদায়ের জন্য সৌদি আরবের একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি আদায়কৃত অর্থের ১০ শতাংশ তাদের দেওয়ার শর্ত দিয়েছে। ফলে টাকা আদায়ে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংককে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই সভাতে আরও কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্থানীয় ব্যাংকগুলোর বিলের দায় শোধ করা অন্যতম। এ জন্য সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার কেটে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডলার কাটার বিষয়টি এখন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক আর্থিক স্থিতিপত্র ও বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। তাই কাগজে-কলমে ব্যাংকটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেশি দেখালেও বাস্তবে তা কম।

সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, এর ফলে ৯৭৩ কোটি টাকার তারতম্য হচ্ছে। ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদনেও সঠিক চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে না।

সোনালী ব্যাংকের ইউকে (লন্ডন) কার্যক্রম নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। জানানো হয়, লন্ডন কার্যক্রমে প্রায় ৫১০ কোটি টাকা প্লেসমেন্ট হিসেবে জমা রেখেছে সোনালী ব্যাংক। এর বিপরীতে সোনালী ব্যাংক মাত্র দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ পাচ্ছে। অথচ সোনালী ব্যাংকের আমানতের খরচই ৫ শতাংশের বেশি।

সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবুল হাসেম বলেন, এ কারণে বছরে ব্যাংক প্রায় ১০০ কোটি টাকা মুনাফার সুযোগ হারিয়েছে। তবে এটি একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। এ কারণে ওই টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানাতে পারেননি। ওই টাকা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়।

সোনালী ব্যাংক ইউকের কার্যক্রম এক দশক ধরেই নানা সংকটে রয়েছে। ব্যবসায় মন্দা, কর্মকর্তাদের অনিয়ম, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের জরিমানা আরোপ—সবই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ধারাবাহিকভাবে লোকসানে পড়তে হয়েছে, যে কারণে নতুন করে মূলধন জোগান দেওয়া হয়।

বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের লন্ডন কার্যক্রমে ২০১৭ সালে লোকসান হয় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে ২০১৮ সালে ৬৫ লাখ টাকা মুনাফা হয়।

ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান গত মাসে যোগ দেওয়ায় এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।