কনডোমিনিয়ামের চাহিদা বাড়ছে

>ছুটির দিন থাকায় গতকাল সারা দিনই মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম ছিল।
আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের স্টলে ফ্ল্যাটের খোঁজে ক্রেতা
আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের স্টলে ফ্ল্যাটের খোঁজে ক্রেতা

সাধারণ ফ্ল্যাটের চেয়ে বাচ্চাদের খেলার জায়গাসহ সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, প্রার্থনাকক্ষ, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা, এটিএম বুথ ও ফার্মেসি আছে—এমন সব সুযোগ-সুবিধাসংবলিত কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের দিকে মধ্যবিত্তের আগ্রহ বাড়ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন সেদিকে ঝুঁকছে। নতুন নতুন প্রকল্প নিচ্ছে তারা।

রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলায় এসে অনেক ক্রেতাই কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। পছন্দ হলে তাঁদের অনেকেই আবার সরেজমিনে প্রকল্প দেখতে চলে যাচ্ছেন। এই তথ্য জানালেন একাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। 

পাঁচ দিনের আবাসন মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার বড়দিন উপলক্ষে ছুটি ছিল। ফলে সারা দিনই মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলায় ১৩০টি আবাসন ও ৩০টি নির্মাণসামগ্রীর প্রতিষ্ঠান এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ২৬০টি স্টল রয়েছে। 

শেল্‌টেকের স্টলে ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন ক্রেতা
শেল্‌টেকের স্টলে ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন ক্রেতা

মেলায় আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন তাদের ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, মগবাজার, পল্টন, নিকেতন, মোহাম্মদপুর, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি প্রকল্পের ৫০০-এর বেশি ফ্ল্যাট তুলে ধরেছে। ১ হাজার ২৫০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের এসব ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। রাজধানীর পল্টন ও নিকেতনে দুটি মিনি কনডোমিনিয়াম আছে প্রতিষ্ঠানটির।

ঢাকা–মাওয়া সড়কে ডুপ্লেক্স বাড়ির প্রকল্পও আছে আমিন মোহাম্মদের। ৩, ৪ ও ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন ডুপ্লেক্স বাড়ির একেকটির দাম ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ১০টি ডুপ্লেক্স বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া গুলশান, মতিঝিল, মহাখালী, দৈনিক বাংলা, কাকরাইলে বাণিজ্যিক প্রকল্প আছে তাদের। প্রকল্পভেদে প্রতি বর্গফুটের দাম ১২ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

জানতে চাইলে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের বিপণন ও বিক্রয় উপব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। পল্টনের মিনি কনডোমিনিয়ামের অধিকাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। বড় আকারের জমি পেলে নতুন কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নেব আমরা।’

ক্রেতাদের তথ্য দিচ্ছেন রূপায়ণের কর্মীরা
ক্রেতাদের তথ্য দিচ্ছেন রূপায়ণের কর্মীরা

শেল্‌টেক্ ঢাকার ধানমন্ডি, মিরপুর, বনানী, গুলশান, কলাবাগান, মালিবাগ, নিউ ইস্কাটন, উত্তর বাড্ডা, শান্তিনগর ও উত্তরার ১১টি ফ্ল্যাট প্রকল্প নিয়ে মেলায় এসেছে। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ৯৭১ থেকে ২ হাজার ২০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার ২০০ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। মিরপুরে শেল্‌টেক্‌ বীথিকা নামের কনডোমিনিয়াম প্রকল্প আছে প্রতিষ্ঠানটির। সেখানে ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ৩৬০ থেকে ১ হাজার ৫২৫ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার ৪৫০ থেকে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া বনানী, মালিবাগ, মিরপুর, শান্তিনগর, মিরপুর ও সিদ্ধেশ্বরীতে শেল্‌টেকের ছয়টি বাণিজ্যিক প্রকল্প আছে।

মেলায় এই প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট বুকিং দিলে ক্রেতারা ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জা, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড়—এই তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি সুবিধা পাবেন বলে জানালেন শেল্‌টেকের জ্যেষ্ঠ বিক্রয় ব্যবস্থাপক সায়দুল মজিদ।

কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের রাজধানীর গুলশান, বনানী, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও উত্তরায় ১৮টি প্রকল্পে ২০০টির বেশি ফ্ল্যাট আছে। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ১৯০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। মিরপুরের কাজীপাড়ায় প্রতিষ্ঠানটির কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে ৭২টি ফ্ল্যাট আছে। সেখানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ৭ হাজার ৮০০ টাকা।

কম্প্রিহেন্সিভ হোল্ডিংসের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়।  প্রথম আলো
কম্প্রিহেন্সিভ হোল্ডিংসের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। প্রথম আলো

জানতে চাইলে কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের উপমহাব্যবস্থাপক কাজী শামসুল আলম বলেন, ‘কনডোমিনিয়ামে সাড়া ভালো। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। ভালো লোকেশনে বড় জায়গা পেলে আমরা নতুন কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নেব।’

উত্তরায় রূপায়ন সিটির দ্বিতীয় ধাপের ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের বর্গফুট প্রতি দাম ১০ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে উচ্চবিত্তের জন্য ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুটের স্কাই ভিলা নামে ১০০টি ডুপ্লেক্স বাড়ি করছে তারা। প্রতি বর্গফুটের দাম ১৫ হাজার টাকা। তা ছাড়া বসুন্ধরা, মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট প্রকল্প আছে তাদের।

জানতে চাইলে রূপায়ন গ্রুপের উপদেষ্টা সাদাত হোসেন সেলিম বলেন, রূপায়ন সিটি উত্তরায় প্রথম ধাপের ফ্ল্যাট আগামী মার্চে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ৬৩ শতাংশ জায়গাজুড়ে খেলার মাঠ, স্কুলসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা থাকায় প্রকল্পটিতে মানুষের আগ্রহ বেশি।