জমি বিক্রিতে মূল্যছাড়

প্রবাসী পল্লি গ্রুপের স্টলে প্লটের খোঁজ নিচ্ছেন ক্রেতারা।
প্রবাসী পল্লি গ্রুপের স্টলে প্লটের খোঁজ নিচ্ছেন ক্রেতারা।

ফ্ল্যাটের পাশাপাশি প্লট বা জমির খোঁজখবর নিতে স্টলে স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। আর তাঁদের আকৃষ্ট করতে মূল্যছাড়সহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে মেলায় অংশ নেওয়া আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত পাঁচ দিনের আবাসন মেলায় গতকাল শুক্রবার গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ক্রেতা–দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তবে সন্ধ্যা থেকে ভিড় বাড়তে থাকে।

বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট বসুন্ধরা আবাসিক এক্সটেনশনের ‘আর’ ব্লকের পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট বা জমি বিক্রি করছে। প্রতি কাঠার দাম ১০ লাখ টাকা। প্লটসংলগ্ন সড়কের অর্ধেক জমি প্লট থেকে বাদ যাবে। সে ক্ষেত্রে ৫ কাঠা জমি কিনলে পাওয়া যাবে ৪ দশমিক ২১ কাঠা। এই জমি ৬০ কিস্তিতে কেনার সুবিধা রয়েছে। মোট বুকিং মানি দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ব্লক পি, পি এক্সেটেনশন, কিউ, কিউ এক্সটেনশনে ৩, ৪, ৫, ১০ ও ২০ কাঠার প্লট আছে তাদের। রেডি প্লটও বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়।
বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়।

জানতে চাইলে ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) জুলফিকার আলী সরকার বলেন, আর ব্লকের প্লটগুলো মূলত মধ্যবিত্তের জন্য করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছি। পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে প্লট হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা–সিলেট রোডে প্রথম ধাপে ৩ হাজার বিঘা জমির ওপর পূর্বাচল প্রবাসী পল্লি করছে প্রবাসী পল্লি গ্রুপ। সেখানে নয়টি ব্লকে ৩ থেকে ২০ কাঠা আয়তনের প্লট আছে। এককালীন অর্থ দিয়ে কিনলে প্রতি কাঠার দাম পড়বে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর কিস্তিতে কিনলে সাড়ে ৫ লাখ টাকা কাঠা। মেলা উপলক্ষে ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর কেউ যদি রেডি প্লট কিনতে চান তাহলে দাম পড়বে প্রতি কাঠা ১৫ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে পূর্বাচল প্রবাসী পল্লির কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লটের চাহিদা বেশি। মধ্য আয়ের মানুষ সাধারণত কিস্তিতে জমি কিনতে চান। আমরা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী প্লট দিতে পারছি।

>

পাঁচ দিনব্যাপী মেলা শেষ হচ্ছে আজ। এতে আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণসামগ্রী কোম্পানিগুলো অংশ নিয়েছে।

এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্ট পূর্বাচল ও মাওয়ায় দুটি প্লট এবং পূর্বাচলে জমিসহ ডুপ্লেক্স বাড়ির একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। ২২১ বিঘা জমির ওপর এশিয়ান ডুপ্লেক্স টাউনে ৫০০টি দ্বিতল বাড়ি হবে। পাঁচ কাঠা জমিসহ বাড়ির দাম পড়বে ২ কোটি টাকা। মেলা উপলক্ষে ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। পূর্বাচলে ১ হাজার বিঘা জমিতে তারা করছে এশিয়ান টাউন। তাতে ১১টি ব্লকে ৩, ৫, ১০ কাঠার প্লট আছে। প্রতি কাঠার দাম ৯ থেকে ১২ লাখ টাকা। ২০২২ সালে চারটি ব্লকের প্লট হস্তান্তর করবে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ঢাকা–মাওয়া মহাসড়কের পাশে ৬০০ বিঘা জমির ওপর এশিয়ান টাউন শান্তিনিবাসে ৩, ৫ ও ৭ কাঠার প্লট আছে। প্রতি কাঠার দাম দাম ৮ লাখ টাকা। রেডি প্লটের দাম প্রতি কাঠা ১০-১২ লাখ টাকা। মেলায় দুইটি প্রকল্পের প্লটে ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে তারা।

এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্টের স্টলে প্লটের খোঁজ নিচ্ছেন ক্রেতারা।
এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্টের স্টলে প্লটের খোঁজ নিচ্ছেন ক্রেতারা।

জানতে চাইলে এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্টের কর্মকর্তা সবুজ হোসেন বলেন, মেলায় আমরা তিনটি ডুপ্লেক্স বাড়ির বুকিং পেয়েছি। এ ছাড়া ১০টির মতো প্লটের বুকিং হয়েছে।

প্রাইম অ্যাসেট পূর্বাচলের কাঞ্চন ব্রিজের পাশে ২ হাজার ১৬০ বিঘা জমির ওপর পূর্বাচল প্রাইম সিটি গড়ে তুলছে। সেখানে ৩, ৪, ৫, ৭.৫ ও ১০ কাঠার প্লট আছে। এককালীন মূল্য পরিশোধে প্রতি কাঠার দাম ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর কিস্তিতে কিনলে প্রতি কাঠার দাম পড়বে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায়। ২০২৫ সালে তাদের প্রকল্প শেষ হবে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা রিফাত খান।

রিচমন্ড গ্রুপ ফ্ল্যাটের পাশাপাশি প্লট প্রকল্প নিয়ে এসেছে। পূর্বাচলের ৮০০ বিঘা জমির ওপর রিচমন্ড কানাডা সিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে ৩, ৪, ৫ ও ১০ কাঠা আয়তনের প্লট আছে। প্রতি কাঠার দাম ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। এককালীন অর্থ পরিশোধে অবশ্য প্রতি কাঠার দাম পড়বে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক প্লটের দাম প্রতি কাঠা ৬-১০ লাখ টাকা। ২০২৩ সাল থেকে প্লট হস্তান্তর শুরু করবে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান সিকদার।

পূর্বাচল প্রাইম সিটি প্রকল্পের মানচিত্র দেখছেন কয়েকজন ক্রেতা।  ছবি: প্রথম আলো
পূর্বাচল প্রাইম সিটি প্রকল্পের মানচিত্র দেখছেন কয়েকজন ক্রেতা। ছবি: প্রথম আলো

প্লট বুকিংয়ের আগে ক্রেতাদের কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার সে বিষয়ে জানতে চাইলে রিহ্যাবের সহসভাপতি সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি রাজউকের অনুমোদিত কি না আগে নিশ্চিত হতে হবে। সম্ভব হলে জমির দলিল দেখা দরকার। আবাসন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়মকানুন ভালো করে জানতে হবে। জমির বর্তমান অবস্থাও ঘুরে দেখা দরকার।

মেলায় সাড়া কেমন জানতে চাইলে রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মেলার প্রথম চার দিনে ১০–১২ হাজার ক্রেতা–দর্শনার্থী এসেছেন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই একটি–দুটি ফ্ল্যাট বা প্লট বিক্রি করেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রি আরও বেশি। সব মিলিয়ে মেলা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে।

পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের আবাসন মেলায় ১১৬টি আবাসন, ৩০টি নির্মাণসামগ্রী এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। আজ মেলার শেষ দিন। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশের টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা।

রিহ্যাবের আবাসন মেলায় প্রতিবছরের মতো এবারও প্রবেশ টিকিটের ওপর র‌্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হবে আজ। এতে প্রথম পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি প্রাইভেট কার, দ্বিতীয় পুরস্কার একটি মোটরসাইকেল। এ ছাড়া টিভি, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোনসেটসহ আরও অনেক পুরস্কার থাকবে।