প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

>বিদায়ী ২০১৯–এর শুরুটা ভালো ছিল, শেষটা তেমন ভালো হলো না। শুরুতে ছিল অনেক প্রতিশ্রুতি, শেষটা ছিল অনেক ক্ষেত্রেই আশাভঙ্গের। কারণ, চাপের মুখে আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সঙ্গে যাঁরা নানাভাবে সম্পর্কিত, তাঁরা কীভাবে দেখছেন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে। কেমন গেল বিদায়ী বছরটি। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী। তাহলে নতুন বছরে যাচ্ছি কী নিয়ে, প্রত্যাশাগুলো কী। ঠিক এই প্রশ্নগুলোই রাখা হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁরা অর্থনীতির মূল্যায়ন যেমন করেছেন, তেমনি বলেছেন কী তাঁরা চান, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অর্থনীতি।
শাকিল রিজভী
শাকিল রিজভী

কেমন গেল
২০১৯ সালটি শেয়ারবাজারের জন্য মোটেই ভালো বছর ছিল না। বছরজুড়েই ছিল মন্দাভাব। যদিও নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসায় জানুয়ারি মাসের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। কিন্তু জানুয়ারির পর থেকে বাজারে টানা পতন শুরু হয়। এ পতনের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল গ্রামীণফোনের সঙ্গে পাওনা নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্ব, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়া, একটি লিজিং কোম্পানিকে অবসায়নের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব, অতিমূল্যায়িত দামে লেনদেন শুরুর পর নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক দরপতন, ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট ও উচ্চ সুদের হারের প্রভাব, চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়া এবং সবশেষে দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থার সংকট। তাই বছরের শুরুতে আমরা বাজার ঘিরে যে প্রত্যাশা করেছিলাম, তা পূরণ হয়নি। ২০১৯ সালে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি সূচক কমে গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। লেনদেনও আড়াই শ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। ভালো কিছু কোম্পানির দাম এতটাই কমে গেছে যে, যা একবারেই অপ্রত্যাশিত।

চ্যালেঞ্জ
শেয়ারবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো এই মুহূর্তে বাজারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো না গেলে বাজারের চলমান সংকট কাটবে না। আর এ সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও অস্তিত্ব–সংকটে পড়বে। ইতিমধ্যে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো দেশি-বিদেশি ব্যক্তিশ্রেণি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করা। বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী না হলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান তারল্যসংকট দূর করে। বর্তমানে লেনদেন আড়াই শ কোটির ঘরে নেমে এসেছে। এ লেনদেনে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পক্ষেও সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা বেশ কষ্টসাধ্য। এ তিনটি চ্যালেঞ্জই একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমি মনে করি, এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হলে অন্যগুলোতেও আপনা–আপনি উন্নতি ঘটবে। 

তিন প্রত্যাশা
নতুন বছরে তিন প্রত্যাশা হলো গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির যে বিরোধ, তার সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশা করি। কারণ, এ সমস্যার সমাধান না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। দ্বিতীয় প্রত্যাশা হলো ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির যে চাপ ছিল, তা ২০ সালে থাকবে না। বিক্রির পরিবর্তে বিদেশি শেয়ার কেনায় আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হবেন বলে প্রত্যাশা করি। তৃতীয় প্রত্যাশা হলো বাজারে ভালো মানের কোম্পানির সংখ্যা বাড়বে। যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। নতুন ও ভালো মানের কোম্পানি বাজারে আনা সম্ভব হলে তার মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারীও বাজারে আসবে।

শাকিল রিজভী
সভাপতি
ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)