পরিবর্তনের গতি আরও বাড়বে

>বিদায়ী ২০১৯–এর শুরুটা ভালো ছিল, শেষটা তেমন ভালো হলো না। শুরুতে ছিল অনেক প্রতিশ্রুতি, শেষটা ছিল অনেক ক্ষেত্রেই আশাভঙ্গের। কারণ, চাপের মুখে আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সঙ্গে যাঁরা নানাভাবে সম্পর্কিত, তাঁরা কীভাবে দেখছেন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে। কেমন গেল বিদায়ী বছরটি। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী। তাহলে নতুন বছরে যাচ্ছি কী নিয়ে, প্রত্যাশাগুলো কী। ঠিক এই প্রশ্নগুলোই রাখা হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁরা অর্থনীতির মূল্যায়ন যেমন করেছেন, তেমনি বলেছেন কী তাঁরা চান, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অর্থনীতি।
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ

কেমন গেল
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র সে বিষয়টিই বারবার জানান দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সার্বিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো একটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এই একটি খাতই বর্তমানে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮ শতাংশ অবদান রাখছে। আমাদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের ৫৩ টাকাই সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশব্যাপী যে অবকাঠামো আমরা তৈরি করেছি, সেটি এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরদর্শিতার অভাব এবং শুধু রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সংকীর্ণ চিন্তা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত করেছে।

চ্যালেঞ্জ
সুনির্দিষ্ট তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হলে একটি হবে আলোচনার মাধ্যমে নিরীক্ষা দাবির বিষয়টি সুরাহা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ তরঙ্গের মূল্য সহনীয় রাখা। তৃতীয়, টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসা যাতে টেকসই হয়, তা নিশ্চিত করা।

নিরীক্ষা আপত্তিকে কেন্দ্র করে এ খাতে এখন যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এমন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আমরা আগামী বছর পথ চলতে চাই।

টেলিযোগাযোগ খাত বর্তমানে দেশে একটি ডিজিটাল বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আমরাও একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল কোম্পানিতে পরিবর্তিত হচ্ছি। ইন্টারনেট ও ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার প্রসারের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে নতুন করে ভেবে দেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এ সুযোগ নিতে এগিয়ে আসছে একঝাঁক তরুণ ডিজিটাল উদ্যোক্তা, যারা নিজেদের উদ্ভাবনী চিন্তা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করে তৈরি করছে নতুন নতুন স্টার্টআপ কোম্পানি। 

দেশজুড়ে বিস্তৃত শক্তিশালী টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের ওপর ভর করে তৈরি হচ্ছে শতকোটি ডলারের ডিজিটাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। রবি পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের প্ল্যাটফর্ম বিডিঅ্যাপসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বর্তমানে ৬০০ জনেরও বেশি তরুণ অ্যাপ ডেভেলপার মাসে এক লাখ টাকার বেশি আয় করছে। 

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য এসেছে ডিজিটাল মার্কেটিং সলিউশন। সাধারণ মানুষের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল বিনোদনের প্রসার ঘটছে। ২০১৯ সালে আমরা এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করেছি। ২০২০ সালে এ পরিবর্তনের গতি আরও বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। 

তিন প্রত্যাশা
তিনটি প্রত্যাশা হলো, নিরীক্ষা দাবি নিয়ে জটিলতার অবসান হবে, টেলিযোগাযোগ খাতে উচ্চ করের বোঝা লাঘব হবে এবং মোবাইল ব্যবসার পরিধি ও পরিব্যাপ্তির ক্রমাগত সংকোচন রোধ হবে। 

ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডেটা অ্যানালিটিকস, ব্লক চেইন প্রযুক্তি নিয়েও আমরা বেশ কিছুদূর এগিয়েছি। সামনে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা বা ফাইভ-জির মতো আরও অনেক চমক অপেক্ষা করছে। পরিকল্পনামাফিক এগোলে ফাইভ-জি হতে পারে নতুন বিপ্লবের মূল হাতিয়ার। সুলভমূল্যে বেতার তরঙ্গ, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ খাতে বিনিয়োগে যে প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো দূর হলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
রবি আজিয়াটা লিমিটেড