বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি আমরা

>বিদায়ী ২০১৯–এর শুরুটা ভালো ছিল, শেষটা তেমন ভালো হলো না। শুরুতে ছিল অনেক প্রতিশ্রুতি, শেষটা ছিল অনেক ক্ষেত্রেই আশাভঙ্গের। কারণ, চাপের মুখে আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সঙ্গে যাঁরা নানাভাবে সম্পর্কিত, তাঁরা কীভাবে দেখছেন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে। কেমন গেল বিদায়ী বছরটি। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী। তাহলে নতুন বছরে যাচ্ছি কী নিয়ে, প্রত্যাশাগুলো কী। ঠিক এই প্রশ্নগুলোই রাখা হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁরা অর্থনীতির মূল্যায়ন যেমন করেছেন, তেমনি বলেছেন কী তাঁরা চান, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অর্থনীতি।
মাসরুর আরেফিন
মাসরুর আরেফিন

কেমন গেল
অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের জন্য ২০১৯ সালটি ছিল ভালো-মন্দে মেশানো। অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ, প্রবাসী আয় ও উৎপাদন খাতের সাফল্যের কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে তেমন তারল্যসংকটও ছিল না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল ও প্রণোদনা দেওয়ায় প্রবাসী আয় বেড়েছে। অন্যদিকে গত চার মাসে রপ্তানি আয় কমেছে, মূলধনি যন্ত্র এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে; যা অর্থনীতির জন্য সুখকর সংবাদ নয়। আবার বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমে গেছে, বেড়েছে সরকারি ঋণের পরিমাণ। অফশোর ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে কঠোর নীতি নেওয়া আমাদের মতো ব্যাংকের জন্য সমস্যা হয়েছে। এরপরও ২০১৯ সালে সিটি ব্যাংকের আমানত বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ, যেখানে দেশের ব্যাংকিং খাতের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। আমাদের পরিচালন মুনাফাও ২২ শতাংশ বেড়েছে।

চ্যালেঞ্জ
সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাত তারল্যঝুঁকির মুখে আছে। এই অবস্থায় স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার তহবিলের একাংশ সরকারি কোষাগারে চলে যাওয়ার আইনটি পাস হলে ব্যাংকিং খাত তারল্যসংকটে পড়বে। আবার সরকার ইতিমধ্যেই ব্যাংকিং খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ ঋণ নিয়ে গেছে।

ঋণখেলাপিদের দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দেওয়ায় অনেক ভালো গ্রাহকও ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে বা যেতে চাচ্ছে। এর মধ্যে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে ব্যাংকের আয় কমে যাবে। সেটা ব্যাংকভেদে ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা। মনে হচ্ছে, বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি আমরা।

বিদেশি রেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং নিয়ে যে মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে, সেখানেও ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে৷ এর কারণে ইতিমধ্যে বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ব্যবসার সীমা কমিয়ে দিচ্ছে আর বাড়িয়ে দিচ্ছে অ্যাড কনফারমেশন খরচ, যেটা বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য এটা বিপৎসংকেত। 

প্রত্যাশা
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার এখন ১১ শতাংশের বেশি আর ঋণখেলাপিরা আদালতে গিয়ে রিট মঞ্জুর করে এনে তাঁদের ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের তাঁদের ব্যাপারে বাইরের অনেক দেশের মতো আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করি, সরকার এসব উদ্যোগ নেবে। রপ্তানি আয় কমছে। ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পই শুধু নয়, গোটা দেশের অর্থনীতি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে, রিজার্ভ কমবে এবং বেকারত্ব বাড়বে। রপ্তানিমুখী বাজেট ও নীতি জরুরি হয়ে পড়েছে। 

আমার প্রত্যাশা, ভবিষ্যতের তারল্যঝুঁকি এড়াতে সরকার আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। খরচ নির্বাহের জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভরশীল হবে না, যাতে বিনিয়োগ করার মতো তহবিল থাকে।

মাসরুর আরেফিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
দি সিটি ব্যাংক