সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান করা হোক

>বিদায়ী ২০১৯–এর শুরুটা ভালো ছিল, শেষটা তেমন ভালো হলো না। শুরুতে ছিল অনেক প্রতিশ্রুতি, শেষটা ছিল অনেক ক্ষেত্রেই আশাভঙ্গের। কারণ, চাপের মুখে আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সঙ্গে যাঁরা নানাভাবে সম্পর্কিত, তাঁরা কীভাবে দেখছেন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে। কেমন গেল বিদায়ী বছরটি। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী। তাহলে নতুন বছরে যাচ্ছি কী নিয়ে, প্রত্যাশাগুলো কী। ঠিক এই প্রশ্নগুলোই রাখা হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁরা অর্থনীতির মূল্যায়ন যেমন করেছেন, তেমনি বলেছেন কী তাঁরা চান, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অর্থনীতি।
শেখ ফজলে ফাহিম
শেখ ফজলে ফাহিম

কেমন গেল
আমরা মনে করি, সরকার যেসব লক্ষ্য ঠিক করেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সে অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। রপ্তানিতে তথ্যপ্রযুক্তির মতো নতুন খাত তৈরি হচ্ছে।

২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে আমরা আট ধাপ উন্নতি করেছি। সামনে আরও উন্নতি হবে। প্রণোদনা দেওয়ায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

অবশ্য বছরের শেষ দিকে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। এর কারণ বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ কারণ নয়। বিশ্বব্যাপী তুলানির্ভর পোশাকের বাজারে চাহিদা কমেছে। আমাদের পণ্য বৈচিত্র্যকরণ সেভাবে হয়নি। সনাতনি পণ্যে সম্প্রসারণ বেশি হয়েছে।

মোটাদাগে অর্থনীতি সঠিক পথে আগাচ্ছে। কিন্তু ছোট ছোট সমস্যা আছে, যা ঠিক করা হলে বাংলাদেশের অগ্রগতি আরও ভালো হবে।

চ্যালেঞ্জ
উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য রাজস্ব আদায়ের নিয়ন্ত্রণগত কাঠামো, বিনিয়োগের নীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ আছে। রাজস্ব ও আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। আর্থিক খাতে গত কয়েক মাসে অ্যাডহক (অস্থায়ী) ভিত্তিতে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত দেখেছি। সর্বশেষ আমরা জানতে পারলাম, উৎপাদনশীল খাতে সুদের হার এক অঙ্কে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। আমরা ব্যাংক খাতে এক অঙ্কের হারে সুদ চেয়েছিলাম, যাতে ব্যবসার খরচ কমে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা সাবধানতার সঙ্গে বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। কারণ, আমরা চেয়েছিলাম, কোনো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নয় মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করা, যাতে সুদের হার কমিয়ে আনা যায়।

আমরা আরও চেয়েছিলাম, যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হয়েছে, তাদের জন্য একটি ‘বেইল আউট’ প্যাকেজ। যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে। আমাদের ধারণা ছিল, এ নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা কাজ করছেন। কিন্তু বর্তমান সিদ্ধান্তে সেটার প্রতিফলন দেখছি না।

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাণিজ্য সহজ করা। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে লিড টাইম বা সময় কমিয়ে আনতে হবে। এটা করা গেলে বাণিজ্য আরও বাড়বে। 

তিন প্রত্যাশা
আমাদের প্রত্যাশা হলো, ছোট ছোট যেসব সমস্যা আছে, সেগুলোর গভীরে গিয়ে সমাধান করা হোক। বিশ্বব্যাপী যেকোনো পরিকল্পনা বা কৌশল ঠিক করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নিয়ে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগোনো হয়, সেটা আর্থিক খাতের পুনর্গঠন বা অন্য কোনো পরিকল্পনা হোক। এতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য পূরণ না হলে মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এতে পদক্ষেপ সঠিক না ভুল, তা বুঝতে দীর্ঘ মেয়াদে অপেক্ষা করতে হয় না। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ছোট ছোট সমস্যাগুলো যাতে ভেবেচিন্তে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আমাদের এখন যে পরিকল্পনাই নেওয়া হোক, তা নিতে হবে ২০২৪ সাল মাথায় রেখে। যেমন রপ্তানি খাতে আমাদের ভালো করতে হবে। এ জন্য সনাতনি পদ্ধতিতে প্রণোদনা না দিয়ে কৌশলী হতে হবে। পোশাক খাতের মতো ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুযোগ প্রতিটি খাতে দিতে হবে। অনিয়ম কোথায় হয়, সেটা তো চিহ্নিত।

শেখ ফজলে ফাহিম
সভাপতি
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)