মূল চ্যালেঞ্জ ব্যাংক খাত ঠিক করা

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

বিদায়ী বছরের শুরুতে অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো থাকলেও শেষের দিকে নেতিবাচক হয়ে যায়। একমাত্র প্রবাসী আয় ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচক খারাপ হয়ে যায়। যেমন রপ্তানি আয়, বেসরকারি ঋণের প্রবাহ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি, রাজস্ব আয় ইত্যাদি।

গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে রপ্তানিতে সাড়ে ৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণের প্রবাহও কমে আসছে। গত সেপ্টেম্বর
মাস পর্যন্ত অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ ১০ শতাংশ হয়েছে, যা মুদ্রানীতির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। এর মানে, বিনিয়োগ হচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের কাছে পর্যাপ্ত ব্যাংকঋণ যাচ্ছে না। অন্যদিকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ৪-৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আছে। এর ফলে শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহৃত হচ্ছে না।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যও অর্জিত হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবর) চার মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে গেছে। ওই সময়ে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা। এটিও ইঙ্গিত দেয় যে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হলে রাজস্ব আদায় আরও বাড়ত।

শেয়ারবাজারের সূচকও অব্যাহতভাবে নামছে। এখন সাড়ে চার হাজারের কাছাকাছি আছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর মধ্যে আস্থার অভাব আছে।

আগামী বছরের মূল চ্যালেঞ্জ হলো—ব্যাংক খাত ঠিক করতে হবে। ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। ব্যাংক খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে সুশাসনের যথেষ্ট অভাব আছে। ঋণখেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক খাত যদি ঠিক হয়, তাহলে বিনিয়োগ আসতে থাকবে। নিয়মিত ঋণগ্রহীতারা ১২-১৩ শতাংশ সুদে ঋণ নেন। কিন্তু ঋণখেলাপিরা ২ শতাংশ এককালীন কিস্তি দিয়ে পরের ১০ বছরে মূল টাকা পরিশোধ করলেই হয়। এই সুবিধা নৈতিক অবস্থানের দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। যেসব ভালো ঋণগ্রহীতা আছেন, তাঁরা খারাপ হয়ে যাবেন। যেহেতু খারাপ থাকলেই বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।

রাজস্ব খাতের জাল বিস্তৃত করাও নতুন বছরের আরেক চ্যালেঞ্জ। যারা নিয়মিত কর দেয়, তাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন নতুন করদাতা খুঁজতে হবে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে। শেয়ারবাজারে দেশি-বিদেশি কোম্পানি এলে এর গভীরতা বাড়বে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটি যাতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে না পারে, সে জন্য এখনই সতর্ক হতে হবে। সার্বিকভাবে এসব কাজ করতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার