সিটির ইজেডে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আশা

হোসেন্দী ইকোনমিক জোনের লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অতিথিরা। বেজার কার্যালয়, ঢাকা, ১ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
হোসেন্দী ইকোনমিক জোনের লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অতিথিরা। বেজার কার্যালয়, ঢাকা, ১ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

নতুন বছরের প্রথম দিনই নতুন একটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (ইজেড) চূড়ান্ত লাইসেন্স বা সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। হোসেন্দী ইকোনমিক জোন নামের অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপ। তারা এতে নিজেরা বিনিয়োগ করবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। সব মিলিয়ে এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে গ্রুপটি।

আজ বুধবার হোসেন্দী ইকোনমিক জোনের লাইসেন্স দেয় বেজা। এ উপলক্ষে রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কে বেজার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেজা ইতিমধ্যে ২০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স দিয়েছে। এর মধ্যে ১১টিকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়া হলো।

হোসেন্দী ইকোনমিক জোনটি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার চর বেতাকি, ভবানীপুর, রগুরচর ও হোসেন্দী মৌজায় ১০৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। এটি মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জামালদী বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার ও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে হোসেন্দীর দূরত্ব ২১৭ কিলোমিটার।

সিটি বলছে, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বিনিয়োগকারীরা নৌপথে খুব ভালো যোগাযোগসুবিধা পাবে। সিটি গ্রুপ নিজেরা ও যৌথ উদ্যোগে এতে বিনিয়োগ করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও জমি দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে।

সিটি গ্রুপ দেশের তেল, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এ ছাড়া তাদের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রাক্‌-যোগ্যতা লাইসেন্স পেয়েছিল। সিটি গ্রুপের এটি দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর আগে তারা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রায় ৭৮ একর জমির ওপর সিটি ইকোনমিক জোন নামের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের লাইসেন্স পায়।

অনুষ্ঠানে হোসেন্দী ইকোনমিক জোনের চেয়ারম্যান শম্পা রহমান বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি এখন ১০৮ একরের হলেও তা ১৫০ একরে উন্নীত করা হবে। এতে কাজ পাবে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। তিনি বলেন, হোসেন্দীতে কাগজের মিল, সিরামিক, লবণ ও রাসায়নিক, জাহাজ নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। জাপান, জার্মানি ও চীনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।

শম্পা রহমান আরও বলেন, হোসেন্দী ইকোনমিক জোনটি পরিবেশবান্ধব হবে। এতে বর্জ্য পরিশোধনের সকল ব্যবস্থা থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁদের সিটি ইকোনমিক জোনে জমি প্রায় শেষ। সেখানে সিটি গ্রুপ ছয়টি কারখানা করছে।

বেজা জানিয়েছে, হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের মহাপরিকল্পনায় ৬৩ শতাংশ জমি কারখানা করার জন্য, সাড়ে ৪ শতাংশ বিশেষ অবকাঠামো ও ১৭ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করা এবং বাকি জমি অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হবে।

‘ভাগ দিতে হবে’
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে যে উন্নতি আসে, তার ভাগ শ্রমিক-কর্মচারীদের দিতে হবে। একক উন্নতি কোনো দিন টেকসই হয় না। তিনি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শুধু নিজেরা বিনিয়োগ না করে অন্যদেরও জমি দেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, উন্নয়নকারীরা অবশ্যই লোকসান দিয়ে জমি ইজারা দেবেন না। তবে ন্যায্যমূল্যে জমি দিতে হবে।

নতুন বছর নিয়ে পবন চৌধুরী বলেন, এ বছর বেজায় ২৬ থেকে ৩০টি সেবা ওয়ান স্টপ সার্ভিস বা এক দরজায় পাবেন। এখন ১৪টি দেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের সেবা নিতে যাতে বেজায় না আসতে হয়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি প্রায় শেষের পথে। বিনিয়োগে প্রচুর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এখন জমি দেওয়া হচ্ছে কম দামে। আগামী দিনগুলোয় তা বাজারমূল্যে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী সদস্য অশোক কুমার বিশ্বাস, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান, পরিচালক মো. হাসান, উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী, পরিচালক (আইন ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক) বিশ্বজিৎ সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।