ব্যয় বাড়ার চাপ দিয়ে শুরু নতুন বছর

ব্যয় বাড়ার চাপের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সীমিত আয়ের পরিবারের নতুন বছর। বছরের প্রথম দুই দিনে যাঁরা বাজারে গেছেন, তাঁরা তো কিনেছেনই, আর যাঁরা আগামী কয়েক দিনে যাবেন, সবাইকে বাড়তি দামে ভোজ্যতেল ও চিনি কিনতে হবে। নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। তা-ও অল্প নয়, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৪০ টাকার মতো বাড়তি।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম, এলাচি ও ময়দার দাম কমবেশি বেড়েছে। কমার তালিকায় একটিও নেই।

বেসরকারি চাকরিজীবী এস এম মোবারক হোসেনকে অবশ্য আরেকটি দুঃসংবাদ দিয়েছেন তাঁর বাড়িওয়ালা। বাড়িভাড়া চলতি মাস থেকে এক হাজার টাকা বাড়তি দিতে হবে। তিনি বলেন, এখন খরচ পোষাতে তিনি রিকশায় চড়া বাদ দিয়ে হেঁটে চলা শুরু করেছেন। আরও দু-একটি উপায় তিনি খুঁজছেন জানিয়ে বলেন, ‘শুনলাম বিদ্যুতের দামও নাকি বাড়বে। এখন খরচ কমানোর উপায় বের করতে পারলে তখন কাজে লাগবে।’

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ঘোষণা আসতে পারে শিগগিরই।

অবশ্য এখনকার দুশ্চিন্তা পেঁয়াজের দাম নিয়ে। পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে প্রতি কেজি দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে কমপক্ষে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৮০ টাকার নিচে ছিল, এখন তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। বাড়তি বিদেশি পেঁয়াজের দামও। চীনা ও তুরস্কের বড় পেঁয়াজ উঠেছে ৫০ টাকা কেজিতে, যা ৩৫ টাকায় নেমেছিল।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দুই দিন ধরে শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে মূল্যবৃদ্ধি। পাইকারির খবর খুচরা বাজারে যাওয়ার পরই দাম বাড়িয়ে দেবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এখন যা ১২০ টাকার আশপাশে পাওয়া যাচ্ছে।

>

নতুন করে কেজিতে ৪০ টাকা বাড়ল দেশি পেঁয়াজের দাম। বাড়তি দরের তেল-চিনি বাজারে এসেছে। বাড়িভাড়াও বেড়েছে।

২০১৯ সালের একেবারে শেষ দিকে, অর্থাৎ গত সপ্তাহে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে। সঙ্গে প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়ানো হয় কেজিপ্রতি ৭ টাকা। এই তেল-চিনি খুচরা বাজারে আসতে শুরু করেছে। এর আগে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা সয়াবিন তেলের দামও লিটারপ্রতি ৮ টাকা ও পাম সুপার তেলের দাম ১৬ টাকার মতো বেড়েছে। বাজেটের পর এখন পর্যন্ত খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ টাকার মতো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর কারণ বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি, বাজেটে কর বৃদ্ধি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। কারণ যা-ই হোক, সব মিলিয়ে মানুষের খরচ বাড়ছে।

টিসিবির হিসাবে, এখন ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি। কম ৭ টির দাম।

কমের তালিকায় প্রধান খাদ্য চাল রয়েছে। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় চালের দাম মানভেদে ৪ থেকে ১৮ শতাংশ কম। যদিও গত বছর চালের দাম অত্যধিক বেশি ছিল। সে তুলনায় এখন কম। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সরু চালের দাম বেশ বেড়েছে।

টিসিবির তালিকায় রুই মাছ ১১, ইলিশ মাছ ৬ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ১১ শতাংশ কম দেখা যায়। এ ছাড়া লবণের দাম ৫, ডিমের দাম ৩ ও লবঙ্গের দাম ৩০ শতাংশ কম।

দাম বেশির তালিকায় জরুরি পণ্যের সংখ্যা অধিক। যেমন খোলা আটা ৫, ময়দা ৫, খোলা সয়াবিন তেল ১৪ ও পাম তেল ২৯, মসুর ডাল ১৬, আলু ৯, পেঁয়াজ ২০৮, রসুন ১৬৬, শুকনা মরিচ ২৫, হলুদ ৩, আদা ২৭, জিরা, গুঁড়া দুধ ৪ থেকে ১৫, চিনি ২৩, গরুর মাংস ১১ ও দেশি মুরগির ১৬ শতাংশ বেশি দাম এখন। গরমমসলার মধ্যে দারুচিনি ৩১ ও এলাচি ১৩৯ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

অপরিবর্তিত রয়েছে খাসির দাম ও অ্যাংকর ডালের দাম।

আগামী পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তিনি আগুনের মধ্যে বাস করছেন।

২০১৯ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় কত বাড়ল, তা ৭ জানুয়ারি জানাবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে চালের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশ কমেছে। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের দাম এত বেড়ে গেছে যে সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকটাই বাড়তি।