সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় তেলের বাজার টালমাটাল হওয়ার আশঙ্কা

গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৮ ডলারের ওপরে। সোলাইমানিকে হত্যার পর দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স
গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৮ ডলারের ওপরে। সোলাইমানিকে হত্যার পর দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স

ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে এর সবচেয়ে তাৎক্ষণিক প্রভাব হলো আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া।

গতকাল এই প্রতিবেদন লেখার সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৮ ডলারের ওপরে। সোলাইমানিকে হত্যার পর দাম ৩ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। এমনকি শুক্রবার একপর্যায়ে এই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৯ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা সেপ্টেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ।

ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে এক মার্কিন ড্রোন হামলায় কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। যদিও পেন্টাগন বলছে, এটি তাদের আত্মরক্ষামূলক আক্রমণ।

এ হামলার ঘটনায় তেলের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তেল কোম্পানির শেয়ারের দামও বেড়েছে। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শেল কোম্পানির বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশের মতো। যদিও মার্কিন বাজারে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জেরে এক্সন মবিলের শেয়ারের দাম কমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উইজডম ট্রি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা অনিকা গুপ্ত বিবিসিকে বলেছেন, ২০২০ সালটা ভালোভাবেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু এই ঘটনা বাজারে তেজিভাবকে থিতিয়ে দিয়েছে।

বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় তেলের বাজার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা ব্যাপক। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল উৎপাদন এমনিতে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ব্যবহৃত ২১ শতাংশ তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়েছে, যার উত্তর উপকূলে ইরানের অবস্থান। ইরান এই প্রণালি দিয়ে তেল পরিবহনে বাধা দিলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। পাশাপাশি তেল উৎপাদকদের ডিপোতে ইরান হামলাও করতে পারে।

তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিজস্ব পাইপলাইন আছে। এটি দিয়ে তারা কিছু পরিমাণ তেল বাইপাস করতে পারে তা ঠিক, কিন্তু হরমুজ প্রণালি দিয়ে যত তেল পরিবাহিত হয়, সেই পরিমাণ তেল এই পাইপলাইন দিয়ে পরিবহন করার সক্ষমতা তাদের নেই।

ধারণা করা হয়, গত বছর সৌদি আরবের আরামকোর ডিপোতে ইরানই হামলা চালিয়েছিল। যদিও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। এদের পেছনে যে আবার ইরানের সমর্থন আছে, তা–ও সবাই জানে।

এর আগে মধ্যপ্রাচ্য যখন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হয়েছে, তখনই তেলের দাম বেড়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে এমনটা হয়েছে।