কীভাবে অর্থব্যয় করেন ধনকুবেররা

ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ তরুণ ধনকুবেরের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার। তাঁরা কম বয়সে এত অর্থের মালিক হয়ে কী করেন বা কীভাবে এই অর্থ ব্যয় করেন, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কৌতূহল থাকে। বিল গেটসের মতো বয়স্ক ও শীর্ষ ধনী যেখানে ধনীদের ওপর আরও করারোপের আহ্বান জানান, সেখানে তাঁরা বিলাসব্যসনেই মত্ত থাকেন। সম্ভবত বয়স এর একটা কারণ।

এই তরুণ শীর্ষ ধনীর তালিকায় সবচেয়ে কম বয়সী হচ্ছেন ২২ বছর বয়সী রিয়েলিটি শো তারকা ও মেকআপ মোগল কাইলি জেনার। ১০০ কোটি ডলারের মালিক এই তরুণীর সম্পদের উৎস কাইলি কসমেটিকস। এই তরুণী মূলত নতুন নতুন বাড়ি কেনা, বিলাসবহুল গাড়িতে নানা বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা ও শিশুসন্তান স্টরমি ওয়েবস্টারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ভালোবাসেন। তিনি আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের সম্পদ জাহির করে থাকেন। নিজের ২২তম জন্মদিনে ২০ কোটি ডলার দিয়ে এক প্রমোদতরি ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রমোদতরির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন কাইলি।

জেনারের পর স্ন্যাপচ্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইভান স্পিগেলের কথা বলা যায়। ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ বিশ্বের তরুণ শীর্ষ ধনীদের অন্যতম। তবে জেনারের মতো নন তিনি, সময় ও অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে তিনি অনেকটা ব্যক্তিগত, জাহির করার স্বভাব তাঁর নেই। বিশেষ করে ২০১৭ সালে মডেল মিরান্ডা কেরকে বিয়ে করার পর তিনি এভাবেই জীবন যাপন করছেন।

তবে দামি বাড়ি কিনতে ইভান পিছপা হন না। স্ত্রী মিরান্ডাকে নিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ব্রেন্টউডে সোয়া কোটি ডলারের বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাস করেন। তাঁর সমুদ্রমুখী মালিবু কটেজের দাম প্রায় ২০ লাখ ডলার।

এরপরই চলে আসে স্ন্যাপচ্যাটের আরেক প্রতিষ্ঠাতা ববি মারফির নাম। তিনি কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তাও। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলার। ফোর্বস-এর প্রতিবেদন অনুসারে মারফি প্যাসিফিক ভেনিস সৈকতের পাশে ৩ কোটি ডলারে বাড়ি কিনেছেন। এরপর সেই বাড়ির সামনেই আরেকটি বাড়ি কিনেছেন ৯৫ লাখ ডলারে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, তিনি আরও সম্পদ কিনতে চান। এ ছাড়া তাঁর আরও অন্তত চারটি বাড়ি কেনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের নাতি ৩৩ বছর বয়সী লুকাস ওয়ালটনের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। বাবার মৃত্যুর পর তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পদের মালিক হয়েছেন। ফার্স্ট সোলার ও আরভেস্ট ব্যাংকে লুকাসের বিনিয়োগ আছে। পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির চেয়ারম্যান তিনি। সেখানে তিনি প্রায় ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার দান করেছেন। জাহির করার স্বভাব লুকাসের নেই। কলোরাডো কলেজ থেকে তিনি ‘পরিবেশগতভাবে টেকসই ব্যবসায়’ ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের ধনীদের মধ্যে এই প্রবণতা কদাচিৎ দেখা যায়।

কলাম্বিয়ার বিয়াল শিল্পের একসময় নিয়ন্ত্রণ করতেন জুলিও মারিও সান্তো ডোমিঙ্গোর পিতামহ। উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি মোট ১৯০ কোটি ডলারের সম্পদ লাভ করেছেন। তিনি একজন ডিস্ক জকি। একটি বিনোদন কোম্পানিও আছে তাঁর। তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে ব্যবসায়িক অংশীদার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অভিযোগ, সান্তো ডোমিঙ্গো তাঁকে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।

একটা লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের ধনী তরুণদের মধ্যে যে ধরনের সংযম বা দূরদৃষ্টি দেখা যায়, প্রথম প্রজন্মের ধনীদের মধ্যে তা কম। এ নিয়ে হয়তো বিশ্লেষকেরা আরও বিশ্লেষণ করবেন।খবর বিজনেস ইনসাইডারের।