ব্র্যান্ডের আসবাবের চাহিদা বাড়ছে দেশে

আধুনিকতা আর দৃষ্টিনন্দন নকশার কারণে দেশের বাজারে ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে আসবাবের ব্র্যান্ড। পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে দেশের আসবাব। তবে এখনো দেশের বাজারের দিকেই অধিকাংশ ব্র্যান্ডেরই নজর। 

আসবাবশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, রুচিশীল মানুষজন ব্র্যান্ডের আসবাবের দিকেই ঝুঁকছে। ফলে প্রতিবছরই ব্যবসার আকার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্র্যান্ডের আসবাব সম্মিলিতভাবে বছরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে।

বাংলাদেশে প্রায় চার দশক আগে ব্র্যান্ডের আসবাবের সঙ্গে দেশের মানুষকে প্রথম পরিচয় করান নিতুন কুন্ডু। তাঁর হাতে গড়া অটবি দেশের পাশাপাশি ভারতে বাজারেও সাড়া ফেলেছিল একসময়। অটবির পরে আসে আসবাবের ব্র্যান্ডে যুক্ত হয় আকতার ও হাতিল। সময়ের ব্যবধানে ঘরবাড়ির পাশাপাশি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মিত আসবাবের চাহিদা বাড়তে থাকে। এই চাহিদা কাজে লাগিয়ে নাভানা, পারটেক্স, ব্রাদার্স, নাদিয়া, হাইটেক, রিগ্যালের মতো নতুন নতুন ব্র্যান্ড হয়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে আসবাবের ব্র্যান্ড আছে ১০-১২টি। 

দেশে কাঠের স্বল্পতা ও দাম বেশি হওয়ার কারণে বেশ কয়েক বছর আগে আমদানি করা কাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বোর্ডের আসবাব তৈরির দিকে ঝুঁকেছে অধিকাংশ ব্র্যান্ড। তবে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে অনেকের পছন্দ কাঠের আসবাব। সেগুন, মেহগনি, ওক, বিচ ওক প্রভৃতি কাঠ মিয়ানমার, কানাডা, জার্মানি, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে আসবাব তৈরি করছে ব্র্যান্ডগুলো।

রপ্তানিতে কয়েক বছর ধরে ভালো করছে আসবাব খাত। পরিমাণ এখনো কম হলেও প্রতিবছরই রপ্তানি আয় বাড়ছে। সাত বছরের ব্যবধানে আসবাব রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ১৪ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এই আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আলোচ্য সময়ে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।

সম্ভাবনা থাকায় সরকার আসবাব রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে। তবে সেটি পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম এইচ রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঠের আমদানি শুল্ক বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে আসবাবে তৈরিতে কাঠ বা বোর্ডের চেয়ে অন্যান্য সরঞ্জামের পেছনেই খরচ বেশি হয়। সেসব আমদানির ওপর রয়ে গেছে উচ্চ শুল্ক। যে পরিমাণ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে শুল্কের অর্থ ফেরত মেলে না। ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। তাই আসবাব রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ড সুবিধা বা নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর দরকার।’