খাবার আনানোর ঝক্কিতেই চালু হাংরিনাকি

খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন হাংরিনাকির এক কর্মী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন হাংরিনাকির এক কর্মী। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বন্ধুরা মিলে কোনো এক ব্যবসার কথা ভাবতে থাকেন। ব্যবসার পরিকল্পনায় এখানে-সেখানে মিটিংয়ে বসেন। কিন্তু পেটে তো কিছু দিতে হয়। আড্ডা হোক বা অফিস মিটিং-পেটে কিছু না পড়লে তা ঠিক জমে না। ড্রাইভার বা অফিস সহকারীকে পাঠানো হতো রেস্তোরাঁয়। তাঁরা গিয়ে মেন্যু দেখে ফোন দিতেন বসদের। এরপর খাবার আসত বন্ধুদের মিটিংয়ে। খাবার পৌঁছে দেওয়াটাই কেন তাঁদের ব্যবসা হবে না! এ ভাবনা থেকেই চালু হলো দেশের প্রথম ‘ফুড ডেলিভারি’ সেবা হাংরিনাকি। 

অ্যাপে বা ওয়েবসাইট থেকে পছন্দের রেস্তোরাঁর খাবার অর্ডার পেয়ে গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার প্রচলন বিশ্বে বহুদিনের। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো সেবা ছয় বছর আগেও ছিল না। অল্প কিছু রেস্তোরাঁ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় খাবার পৌঁছে দিত। ২০১৩ সালে আহমাদ এডি, তৌসিফ আহমেদ, সাজিদ রহমান ও ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন মিলে শুরু করেন হাংরিনাকি। তাঁদের মধ্যে তৌসিফ আহমেদ এ বছর মারা যান এবং সাজিদ রহমান প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেন। বর্তমানে হাংরিনাকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে আহমাদ এডি ও ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন ডেপুটি সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে হাংরিনাকির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। বাংলাদেশে স্টার্টআপ হিসেবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান শুরুর দিককার গল্প শোনান ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সময়ে রেস্তোরাঁয় গিয়ে গিয়ে বোঝাতে হয়েছে। তখন রাইডাররা নগদ অর্থ দিয়ে খাবার নিত না। মাসে বা সপ্তাহে রেস্তোরাঁগুলোকে টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু অনেক রেস্তোরাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কখনো অগ্রিম টাকাও দিতে হয়েছে। আস্থার জায়গা তৈরি করতে হয়েছে।’ সেই হাংরিনাকি সাড়ে চার হাজার রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত।

মাত্র চারজন সরবরাহকারী (যাঁদের বলা হয় ‘ফুড ডেলিভারি ম্যান বা রাইডার) নিয়ে গুলশান-বনানী এলাকায় হাংরিনাকি সেবা দেওয়া শুরু হয়েছিল। এখন তাঁদের সাড়ে চার শ সরবরাহকারী আছেন। বেলা ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। দিনে তিন হাজারের মতো অর্ডার আসে। ছুটির দিনে আরও বেড়ে যায়। 

ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাইডারদের আমরা প্রশিক্ষণ দিই। প্রথম তিনজন রাইডার এখন প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছে। গ্রাম থেকে ছেলেদের এনে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে সাইকেল ও মোবাইল কিনে দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। ফ্রিল্যান্স রাইডারও নেওয়া হবে।’ ঢাকায় ৯টি হাব আছে হাংরিনাকির। যেমন বনানী, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, মিরপুর, উত্তরা, লালবাগ ও মতিঝিল। এসব জায়গার মধ্যে বড় হাবগুলোয় রাইডারদের থাকার ব্যবস্থা আছে। ঢাকা ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও খুলনায় তাদের সেবা চালু আছে। সাভার ও বরিশালে শিগগিরই চালু হবে। 

ফুড ডেলিভারি সেবার ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের দেশে দিন শেষে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খাবার। মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খাবারের চাহিদা কমেনি। এই সেবার সঙ্গে মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে।’ 

সেবার প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ইব্রাহিম বলেন, ‘কোনো কারণে দেরি হলে বা রেস্তোরাঁ যদি সঠিক খাবারটা না দেয়, তার দায়ও আমরা নিয়ে থাকি। কারণ, পার্টনারশিপ আমার, ডিল করি আমরা। কারণ, গ্রাহকেরা আমাদের কাছেই অভিযোগ জানান, ভুল খাবার গেলে তার দায়ও নিই এবং প্রয়োজনে পরিপূরক বা কমপ্লিমেন্টারিও দিই।’ ভুল হলে ফোন করার পাশাপাশি চিঠি দিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেন বলে জানান। 

ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন জানান, তাঁরা সম্পূর্ণ দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান। দেশেই নিবন্ধিত কোম্পানি তাঁরা। তবে বাজারে এখন বেশ প্রতিযোগিতা আছে। বাজার এখন ডিসকাউন্টের ওপর বেশি চলছে, যেটা বাজারের জন্য ভালো নয়। বাজারে এখন অনেকেই নিজেদের পকেট থেকে ডিসকাউন্ট দেয়, কিন্তু রেস্তোরাঁ তা জানে নয়। এটা বাজারের জন্য ক্ষতিকর। 

হাংরিনাকি চায় বাংলাদেশ এমন একটা দেশ হোক, যেখান থেকে কোনো স্টার্টআপ সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা যেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর ওপর ভরসা করতে পারে, সে লক্ষ্যেও তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন।