ব্যয় ২৫০ টাকা, দাম ১৮০ টাকা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে জমিতে পড়ে আছে উৎপাদিত লবণ। ভালো দাম না পাওয়ায় চাষিরা লবণ বিক্রিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।  ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে জমিতে পড়ে আছে উৎপাদিত লবণ। ভালো দাম না পাওয়ায় চাষিরা লবণ বিক্রিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ছবি: প্রথম আলো

লবণ উৎপাদনের এখন ভরা মৌসুম। অথচ কক্সবাজার উপকূলের প্রান্তিক চাষিরা উৎপাদন বন্ধ রেখে লবণের ন্যায্যমূল্য আদায়ে মাঠে নেমেছেন। গত কয়েক দিনে মহেশখালী, কক্সবাজার শহর, চকরিয়া, টেকনাফ ও কুতুবদিয়ায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চাষিরা। 

লবণচাষিরা বলছেন, এক মণ (৫০ কেজি) লবণের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা। বাজারে দর মিলছে ১৮০ টাকা। ফলে মণে লোকসান ৭০ টাকার মতো। 

উপকূলজুড়ে লবণ উৎপাদনে জড়িত প্রায় ৪৪ হাজার চাষি। তাঁদের হতাশায় এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) জেলার আটটি উপজেলায় ৬০ হাজার ৫৫৯ একর জমি লবণ উৎপাদনের আওতায় এসেছে। উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাড়ে ১৮ লাখ মেট্রিক টন, যা বার্ষিক জাতীয় চাহিদার সমান। 

বিসিকের হিসাবে, ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৩৯ হাজার টনের কিছু বেশি। গত মৌসুমের একই সময় উৎপাদিত হয়েছিল ৯৭ হাজার টন। 

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ও চৌফলদন্ডি ইউনিয়ন ঘুরে গত সপ্তাহে দেখা যায়, উৎপাদিত বিপুল লবণ মাঠে পড়ে আছে। চৌফলদন্ডির চাষি মনজুর আলম বলেন, গত বছর এ সময়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ৩৭০ টাকা। এখন সেই লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। তিনি নিজেই অর্ধেক জমিতে লবণ উৎপাদন করছেন, বাকিটা বন্ধ। এক মৌসুমে সাধারণত আড়াই একর জমি লবণ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করেন মনজুর আলম।

টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলাতেও লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করছেন চাষিরা। 

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের আছারবনিয়া গ্রামের চাষি আজিজুল হক বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ লবণ (৪৭ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ লবণ আমদানির কারণে এই দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। 

চকরিয়ার চাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, চাষিদের লবণের কেজি ৪ টাকা। বাজারে তা ঠিকই ২০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। 

চাষিদের সুরক্ষা দিতে দেশে ভোজ্যলবণ আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু শিল্পলবণের ঘোষণা দিয়ে প্রচুর ভোজ্যলবণ আমদানি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার লবণচাষি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, অসাধু একটি চক্র বিদেশ থেকে লবণ এনে দেশীয় লবণশিল্পকে ধ্বংস করছে। 

চাষিদের সাত দফা

চাষিরা লবণ নিয়ে সাতটি দাবি করছেন। এ নিয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

দাবিগুলো হলো মাঠপর্যায়ে লবণের মূল্য প্রতি কেজি ১১–১২ টাকা নির্ধারণ, লবণ আমদানি নিষিদ্ধ করা, মানবদেহের ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সহজ শর্তে লবণচাষিদের ঋণ প্রদান, ২ লাখ টন লবণ মজুত, প্রান্তিক চাষিদের ঋণ মওকুফ এবং প্রণোদনা প্রদান।

এদিকে সরাসরি মাঠ থেকে ১ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ কেনার জন্য বিসিক মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ চেয়েছে। গত সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের শহীদ এ টি এম জাফর আলম সম্মেলনকক্ষে লবণ উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারদর বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বিসিক কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সৈয়দ আহামদ এ তথ্য জানান।