মুঠোফোন থেকে ব্যাংকে টাকা

>

শিগগিরই চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক
পুরোদমে চালু হলে এমএফএস থেকে টাকা যাবে ব্যাংকে
বিকাশ–রকেটের মধ্যেও হবে লেনদেন

বিকাশের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেওয়ার পদ্ধতি চালু হচ্ছে। একইভাবে ব্যাংক থেকেও সব মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টাকা পাঠানো যাবে। আবার বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ ও ইউক্যাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেন করতে পারবে। এ সেবাকে বলা হচ্ছে ইন্টার অপারেটরেবিলিটি। পরে লেনদেন সেবা দেওয়া ‘আইপে’র মতো প্রতিষ্ঠানও এতে যুক্ত হবে। 

এ সেবা চালু হলে গ্রাহকেরা সহজে টাকা জমা, উত্তোলন ও খরচ করতে পারবেন। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের (এনপিএসবি) মাধ্যমে এ সেবা মিলবে। এ সেবা চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। শিগগিরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে এ সেবা চালুর চেষ্টা করছি। সবাই আগ্রহী ছিল না, এখন রাজি হয়েছে। শিগগিরই গ্রাহকদের জন্য তা চালু হবে। বৈশ্বিকভাবে এ সেবায় যে লেনদেন হয় তা ৭ শতাংশের মতো। ফলে বাংলাদেশেও এর বেশি লেনদেন হবে না। তবে এনপিএসবিকে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। 

জানা যায়, এ সেবা দেওয়ার জন্য প্রথম দিকে যুক্ত হচ্ছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বিকাশ। পাশাপাশি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশও এনপিএসবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ সেবা দেবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে পূবালী, ইসলামী ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নিজেও এ সেবায় থাকছে। 

 এর ফলে বিকাশ, এমক্যাশ ও ইউক্যাশের গ্রাহকেরা সহজেই ইসলামী, পূবালী, ইউনাইটেড কমার্শিয়ালের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিতে পারবে। আবার এ তিন ব্যাংকের হিসাব থেকেও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টাকার পাঠানো যাবে। পাশাপাশি বিকাশ, এমক্যাশ ও ইউক্যাশে নিজেদের মধ্যে লেনদেন করা যাবে। 

পরে এ সেবায় যুক্ত হবে রকেট, শিওরক্যাশসহ অন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। সব ব্যাংকও ধীরে ধীরে এ সেবায় যুক্ত হবে। 

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ইউক্যাশের প্রধান নুরুল হক বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবায় যুক্ত হয়েছিলাম। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেবা চালুর অপেক্ষায়। 

পূবালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, এ সেবা চালু হলে সব ব্যাংকের গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সব সুবিধা নিতে পারবেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, মোবাইল থেকে ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাশুল গুনতে হবে। সেটা ১ দশমিক ৮ শতাংশ বা এর কম হতে পারে। তবে ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা পাঠাতে কোনো মাশুল দিতে হবে না। 

এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এনপিএসবি ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে এখন আন্তব্যাংক কার্ডভিত্তিক ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেন সম্পন্ন হয়। এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম হতে সহজেই টাকা তুলতে পারেন। আবার এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) টার্মিনালের মাধ্যমে কেনাকাটা বা বিল শোধ করতে পারেন। 

ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সেবা চালু করলেই আমরা তাতে যুক্ত হব।’ 

২০১১ সালের মার্চে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ‘বিকাশ’। এরপর আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি বিকাশের নিয়ন্ত্রণে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এ সেবার গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮৫ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক সাড়ে ৩ কোটি। আর দেশজুড়ে এ সেবা দিতে এজেন্ট রয়েছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার। নভেম্বরে দৈনিক লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ২৬ কোটি টাকা, বেতন–ভাতা প্রদান হয়েছে ৮৭০ কোটি টাকা, পরিষেবা বিল দেওয়া হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা, সরকারি ভাতা প্রদান হয়েছে ২৯৪ কোটি টাকা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দিনে পাঁচবারে ৩০ হাজার টাকা জমা করা যায়। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ ২ লাখ।