কৃষকের হাতছাড়া হওয়ার পরেই চালের দাম বাড়ল

বছরের মে মাসে কৃষকের কাছে সবচেয়ে বেশি ধান মজুত থাকে। আর এই সময়ে ধান-চালের দামও থাকে সবচেয়ে কম। জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কৃষকের মজুত ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ধান চলে যায় ব্যবসায়ী ও মিলমালিকের কাছে। আর তখনই বাড়তে থাকে দাম।

ধান-চালের মজুত এবং দাম নিয়ে এই পর্যবেক্ষণ খাদ্যনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইফপ্রি, বাংলাদেশের। ২০১৬-১৭ সালের বাজার বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। এ বছরও ধান-চালের বাজারে একই চিত্র পেয়েছে সংস্থাটি। তবে এবার মোটা চালের চেয়ে সরু ও মাঝারি চালের দাম বেশি বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসে সরু ও মাঝারি চালের দাম যথাক্রমে সাড়ে ৮ শতাংশ ও ১১ শতাংশ বেড়েছে, আর মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

এই পরিস্থিতিতে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে। এতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালের দাম আরও বাড়া উচিত। কারণ, এত দিন কৃষক ধানের দাম পায়নি। চালের দাম বাড়ার কারণে ধানের দাম বাড়বে। এতে কৃষক লাভবান হবে। মোটা চালের তুলনায় সরু চালের চাহিদা বেড়েছে। এতে মূলত দাম বেড়েছে।’

টিসিবির হিসাবে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেড়ে হয়েছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি চালের দর ছিল ৪২ থেকে ৫০ টাকা। গতকাল তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। তবে মোটা চালের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল, তা হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইফপ্রি, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই সময়ে চালের দাম সাধারণত বাড়ে। কিন্তু এবার সরু চালের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়েছে। এটা কেন ঘটল, তা সরকারের অনুসন্ধান করে দেখা উচিত।

>

চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকির পরিপত্র জারি
এতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) গত নভেম্বর মাসে দেশের চালের বাজারের ওপরে একটি সমীক্ষা করেছে। এতে বলা হয়েছে, ধান–চালের বাজারে ৯৪৯টি অটো চালকল নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। বাজারে কত দামে ধান–চাল বিক্রি হবে, তা ওই বড় চালকলগুলোর ওপর নির্ভর করে। এমনকি চাল আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা প্রধান। এগুলোর মধ্যে ৫০টি চালকল ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের গরিব মানুষও সরু চাল খাচ্ছে, তাই দাম বাড়ছে। রপ্তানি হলেও দাম বাড়বে না বলে তিনি মনে করেন।

তবে চালের দাম যে হারে বেড়েছে, ধানের দাম সেই হারে বাড়েনি। রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বেশির ভাগ চালের মোকামে ধানের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা ধানের দর কেজিতে ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৬ টাকা হয়েছে। অথচ সরকার ওই ধানের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা। আর সরু ধানের দর প্রতি কেজি ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২২ টাকা হয়েছে।

 এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চালের দাম যখন বাড়ছে, তখন সরকার থেকে রপ্তানির ওপরে প্রণোদনা হিসেবে ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণাটি ঠিক হয়নি। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।