আমানতের সুদ কমাচ্ছে ব্যাংক

টাকা। প্রতীকী ছবি
টাকা। প্রতীকী ছবি

ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য আমানতের সুদের হার কমাতে শুরু করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ইতিমধ্যে কমবেশি ১৫টি ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদ কার্যকর করেছে। বাকি ব্যাংকগুলোও এখন একই পথে রয়েছে। তারা সবাই চলতি সপ্তাহেই আমানতের সুদহার কমিয়ে আনবে। কিন্তু সব ব্যাংক এখনই সব আমানত পণ্যের সুদহার ৬ শতাংশে নামাচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে পুরোনো আমানতের সুদহারে কোনো পরিবর্তন হবে না।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো চাইছে, ঋণের সুদ ৯ শতাংশ করা হলেও এসএমই ও খুচরা ঋণকে এই হারের বাইরে রাখা হোক। এ জন্য অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখারের নেতৃত্বে ছয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি আমানতের সুদের হার কমিয়ে আনার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। কেউ যাতে বেশি সুদে আমানত তুলে নিয়ে না যায়, তা তদারকির জন্য গতকাল তাঁরা গভর্নরকে অনুরোধ করেছেন।

সূত্র জানায়, আগামী এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর স্কিম ছাড়া সব আমানতের সুদহার হবে ৬ শতাংশ। এ কারণে তিনটি ব্যাংক গত জানুয়ারি থেকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনে। কিন্তু এসব ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের আমানত ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদে অন্য ব্যাংকগুলো নিয়ে যেতে শুরু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার ব্যাংকের এমডিরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিটি ব্যাংক নিজেদের অ্যাসেট লায়াবিলিটি কমিটিতে (অ্যালকো) আলোচনা করে আমানতের সুদহার এখনই কমিয়ে আনবে। চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে নেমে আসে, তা সব ব্যাংককে নিশ্চিত করতে হবে। আর ঋণের সুদহারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিলে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর হবে। এদিকে সরকারি ব্যাংকগুলো বেশ আগে থেকেই আমানত ও ঋণের সুদহার কমিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫টি ব্যাংক আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের শাহজালাল ইসলামী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ও ব্যাংক এশিয়া গত জানুয়ারিতেই সুদহার কমিয়েছে। নতুন করে আমানতের সুদহার কমিয়েছে ইস্টার্ণ, ঢাকা, মার্কেন্টাইল, প্রাইম, সাউথইস্ট, ইউসিবি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, দি সিটি, এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামীসহ কয়েকটি ব্যাংক।

>

নতুন আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে পুরোনো আমানতের সুদহারে কোনো পরিবর্তন হবে না।

জানতে চাইলে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) এমরানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানুয়ারিতে দেড় শতাংশ কমানো হয়েছিল। এবার স্কিম ছাড়া সব আমানতে সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাল (সোমবার) থেকে তা কার্যকর হবে।’

তবে সব ব্যাংক যে সব ধরনের আমানত পণ্যে সুদহার ৬ শতাংশে এনেছে, তা কিন্তু ঠিক নয়। দেখা গেছে, এখনো ৩ মাস মেয়াদি আমানতে ইস্টার্ণ ব্যাংকের সুদহার ৭ শতাংশ। অনেক ব্যাংকই তা ৬ শতাংশে এনেছে। আবার এক বছর মেয়াদি আমানতে মার্কেন্টাইল ও প্রাইম ব্যাংকের সুদ ৭ শতাংশ, ইস্টার্ণ ব্যাংকের তা ৫ শতাংশ। আবার অনেক ব্যাংকে তা ৬ শতাংশ। ফলে এক ব্যাংক থেকে সহজেই আমানত অন্য ব্যাংকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মতিউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমানতের সুদ কমিয়েছি। তবে সব পণ্যে না। কারণ, অনেক ব্যাংকই সব পণ্যে ৬ শতাংশে আনেনি। এ কারণে আমরাও বুঝে–শুনে সুদ কমাচ্ছি।’

এদিকে গতকাল এবিবির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ব্র্যাক, দি সিটি, প্রাইম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও এনআরবি ব্যাংকের এমডি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। সুদ কমানোর কারণে এক ব্যাংকের আমানত যাতে অন্য ব্যাংকে চলে না যায়, তা তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আহ্বান জানান তাঁরা।

জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘এসএমই ও রিটেইল ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আমানতের সুদহার কমানোর বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি।’

গত ডিসেম্বরে ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, নতুন বছরের (২০২০ সাল) এপ্রিল মাস থেকে সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তবে এখনো সুদহার নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরপর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো আমানত নিতে পারবে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে। আর ৬ শতাংশ সুদে আমানত পাবে বেসরকারি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলো। যদিও এর ফলে ব্যাংক খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।