'মসলা ছাড়াই রাঁধতে হবে'

>মসলার বাজারে কোনো স্বস্তি নেই। একসঙ্গে চড়া পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, দারুচিনি ও এলাচির দাম।

বাজারে চড়া দামের পণ্যতালিকায় এখন আর শুধু পেঁয়াজ নয়, যোগ হয়েছে আদা, রসুন, শুকনা মরিচ ও হলুদও। গরমমসলার বাজারে এলাচির সঙ্গে তাল মিলিয়েছে দারুচিনি। সব মিলিয়ে মসলার বাজার স্বস্তিহীন। যদিও রান্নার এসব পণ্য না কিনে উপায় নেই।

সব মিলিয়ে বিরক্ত বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আসাদুজ্জামান। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার রেসিপি দিতেন। তাঁরা কি এখন নতুন কোনো রেসিপি দেবেন, মসলা ছাড়াই কি রাঁধতে হবে?’

ঢাকার কারওয়ান বাজার ছাড়া গত দুই দিনে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কাজীপাড়া, বনানীর একটি সুপারশপ ও তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি বটতলা কাঁচাবাজার ঘুরে চড়া দামে বিক্রি করতে দেখা যায় মসলাজাতীয় পণ্য। বাজারে দুই মাসে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের দাম বেড়েছে। সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে মাঝারি আকারের একটি ফুলকপি কিনতে ৩০ টাকা লাগছে। এক কেজি ভালো টমেটো ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। কাজীপাড়া বাজারে সকালে শালগম কিনতে গেলে বিক্রেতা দাম চাইলেন ৪০ টাকা। যদিও মুলা বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ২০ টাকায়।

সব মিলিয়ে আগে থেকেই বাজার অস্থির। এর মধ্যে ঘি ঢালল চীনের করোনাভাইরাস। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন থেকে এখন পণ্য আমদানিতে বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণে রসুন, আদা ও দারুচিনির দাম বেড়েছে। এ তিন পণ্যের জন্য বাংলাদেশ অনেকাংশে চীনের ওপর নির্ভরশীল।

খুচরা বাজারে রসুনের কেজি মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। চীনা রসুনের দর কম, বেশি দেশির। নতুন দেশি রসুন কোথাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে, কেজি ১৭০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও চীনা রসুন ১৫০ টাকার আশপাশে ছিল। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২২০ টাকা।

দুই সপ্তাহ আগেও বাজারে প্রতি কেজি চীনা আদা ১৫০ টাকার আশপাশে ছিল। ভারতের কেরালা ও থাইল্যান্ডের আদা বিক্রি হতো ১৪০ টাকার কাছাকাছি দরে। এখন দুই আদার কেজিই ১৮০ টাকার আশপাশে। কারওয়ান বাজারে কিছু নতুন আদা দেখা যাচ্ছে, যার প্রতি কেজির দাম ১২০ টাকার আশপাশে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে আদার কেজি ১০০ থেকে ১৮০ টাকা।

বাজারে এখন দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের কেজি ১৪০ টাকার আশপাশে ও আমদানি করা ছোট পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং বড় তুরস্ক ও মিসরীয় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

শুকনা মরিচ খাওয়া ছাড়তেই হচ্ছে। সাধারণত প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে যে মরিচ পাওয়া যায়, তা এখন ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা। অবশ্য বড় বাজারে কিছু মরিচ ২৮০ টাকা দরেও মিলছে। টিসিবি বলছে, বাজারে এখন শুকনা মরিচের কেজি ২৬০ থেকে ৪০০ টাকা। অবশ্য কাঁচা মরিচ আড়াই গ্রাম ২০ টাকায় পাওয়া যায়। তাই বলে শুধু কাঁচা মরিচ দিয়ে মাছ রান্না করলে তরকারির লালচে রং কিন্তু আসবে না। হলুদের দাম প্রতি কেজি ২০ টাকা বেড়ে সর্বনিম্ন ১৬০ টাকায় উঠেছে।

এলাচির দাম এক বছর ধরে ধাপে ধাপে বেড়ে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন চার হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। কিছুদিন আগে দাম আরও বেশি ছিল। এখন সে তুলনায় কিছুটা কম। নতুন করে বেড়েছে দারুচিনির দাম। কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে দারুচিনি এখন প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তবে মানুষের বড় দুশ্চিন্তার জায়গা চাল। মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। নভেম্বরের শুরুতে যা ৪২ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে ছিল। সপ্তাহখানেক আগেও এক দফা দাম বেড়েছে। বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি সরকার চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

সব মিলিয়ে চালের দাম কমার আশা নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কৃষি মার্কেটের চালের আড়ত তিতাস এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল মতিন বলেন, বোরো চাল আসার আগে বাজারে দাম কমার আশা নেই।