চীনের সব কারখানা এখনো খোলেনি

চীনের সাংহাই প্রদেশের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মীরা ফগিং যন্ত্র ব্যবহার করে করোনাভাইরাসমুক্ত করার চেষ্টা করছেন। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত নয় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।  ছবি: এএফপি
চীনের সাংহাই প্রদেশের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মীরা ফগিং যন্ত্র ব্যবহার করে করোনাভাইরাসমুক্ত করার চেষ্টা করছেন। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত নয় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় এ বছর চীনের চান্দ্র নববর্ষের ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। সেই ছুটি শেষে গতকাল চীনের অনেক কারখানায় কাজ শুরু হলেও অনেক কারখানা এখনো খোলেনি। বলা বাহুল্য, এই ছুটির কারণে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে চীনের অর্থনীতিতে।

কারখানা বন্ধ থাকায় অনেক বড় বড় গাড়ি কোম্পানির যন্ত্রাংশে টান পড়েছে। অ্যাপল ফোনের সরবরাহ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও অনেক বড় কারখানা এখনো বন্ধ।

অ্যাপলের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী ফক্সকনের বৃহত্তম চীনা কারখানা এখনো খোলেনি। শেনঝেনের লংহুয়ায় এই কারখানা অবস্থিত।এই শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কারখানা খুলবে না।

গত সপ্তাহে ফক্সকন কারখানা চালুর অনুমতি চেয়ে পীড়াপীড়ি করেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের লাখ লাখ কর্মী সংক্রমণ ঠেকাতে মুখোশ ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া তাঁদের নিয়মিতভাবে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে।

নিশান ও পিএসএর মতো গাড়ি কোম্পানিগুলো বলেছে, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের কারখানা বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ, টয়োটা ও হোন্ডার মতো কোম্পানিগুলো বলেছে, আগামী সপ্তাহে তাদের কারখানা খুলবে। একই সঙ্গে ফরাসি গাড়ি কোম্পানি ভ্যালিও বলেছে, উহানে তাদের যে তিনটি গাড়ি কারখানা আছে, সেগুলো ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

করোনাভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে বৈশ্বিক গাড়িশিল্পে। যে হুবেই প্রদেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা গেছে, সেই শহর এখন রীতিমতো বন্ধ। হোন্ডা, জেনারেল মোটরস, ডংফেং মোটর—সবার কারখানা আছে এই প্রদেশে।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানি প্রথম কোম্পানি হিসেবে চীনের বাইরেও কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, ভাইরাসের কারণে চীনে তাদের কারখানা বন্ধ থাকায় অন্যান্য দেশের কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

>

চীন থেকে যন্ত্রাংশ আসছে না বলে কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানি প্রথম কোম্পানি হিসেবে চীনের বাইরে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে

ফিয়াট ক্রাইসলারও বলেছে, চীন থেকে যন্ত্রাংশ আসছে না বলে ইউরোপে তাদের কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। ভারতের সুজুকিও বলেছে, চীন থেকে যন্ত্রাংশ আসছে না বলে ভারতে কারখানা বন্ধ রাখতে হতে পারে।

বাণিজ্যযুদ্ধ ও ব্রেক্সিটের মতো রাজনৈতিক কারণে বিশ্বায়ন এমনিতেই ধাক্কা খাচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াও বিশ্বায়নের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। বিবিসির এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক পাঠক মন্তব্য করেছেন, বিশ্বায়নের কথা ভুলে এখন সবাইকে নিজ দেশে উৎপাদন করতে হবে। এ ধরনের রোগের প্রকোপ বিশ্বায়নকে অসম্ভব করে তোলে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।

চীনে রোগ ঠেকাতে রোবট

কিছু চীনা প্রযুক্তি সংস্থা বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। এতে ব্যবহারকারীরা জানতে পারবেন, তাঁরা যে বিমানে উঠেছেন বা ট্রেনে চেপেছেন, তাতে কোনো ভাইরাস-আক্রান্ত রোগী সফর করেছেন কি না। গুয়াংঝৌয়ের একটি বাজার এলাকায় আবার যন্ত্রমানব নিয়োগ করা হয়েছে। কেউ মাস্ক পরে না হাঁটলেই বকা দিচ্ছে সেই রোবট।

বেইজিংয়ের কোনো কোনো হাউজিং কমিটি ডেটা ট্র্যাকিং শুরু করেছে। এমনই একটি কমিটি জানিয়েছে, তাদের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ২ হাজার ৪০০ লোক থাকেন। প্রত্যেকের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। বিশ্বের উৎপাদন কারখানা। ফলে সেই কারখানা কত দিন এভাবে বন্ধ রাখা যাবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। খবর বিবিসি