রসুন আমদানির ৯৬% আসে চীন থেকে

রসুন আমদানিতে চীনের ওপর নির্ভরতা কাটানো কঠিন। তবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আদা আমদানি বাড়ানো যায়। অবশ্য বর্তমানে চীনের বাইরে ওই দুই দেশ থেকে আদা আমদানি হচ্ছে। বাজারে আদার দামও কমছে। কিন্তু কমছে না রসুনের দাম। 

চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর রসুন ও আদা আমদানি বিঘ্নিত হওয়ার দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে বাজারে রসুনের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। আদার দামও বেড়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে রসুন ও আদার চাহিদা, আমদানির পরিমাণ ও উৎস দেশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করা যায়, তার সুপারিশ করা হয়েছে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন রসুনের দাম ১৫০ থেকে ২১০ টাকা কেজি। এক মাস আগে তা ছিল ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা। টিসিবির তালিকা অনুযায়ী, বাজারে এখন এক কেজি আদার দাম ১০০ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা ছিল। 

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রসুন উৎপাদিত হয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন। সেখান থেকে পচে যাওয়া রসুনের হিসাব বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার টন। রসুনের চাহিদার ১৩ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয় বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন। 

অন্যদিকে আদার চাহিদা বছরে প্রায় ৩ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৯২ হাজার টন। পচে যাওয়া বাদ দিয়ে উৎপাদন ধরা হয় ১ লাখ ৭৩ হাজার টনের মতো। তাতে মোট চাহিদার ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। 

ট্যারিফ কমিশন হিসাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উৎপাদন পরিসংখ্যান ধরে। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে হিসাব দেয়, তার সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বড় ফারাক দেখা যায়। যেমন বিবিএসের হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রসুনের উৎপাদন ৪ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মূল উৎপাদনের হিসাবের চেয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার টন কম। একইভাবে বিবিএসের হিসাবে আদার উৎপাদন ৮০ হাজার টন, যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চেয়ে ১ লাখ ১২ হাজার টন কম। 

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ৫২ হাজার ৪৬১ টন রসুন আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। আর একই সময়ে আদা আমদানি হয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৪৮১ টন। মোট আমদানির ৪১ শতাংশ চীন, ২৮ শতাংশ ভারত ও ২১ শতাংশ মিয়ানমার থেকে এসেছে। 

>ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন। করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে আমদানি বিঘ্নিত। দাম বেড়েছে। কমিশন বলছে, আদায় চীননির্ভরতা কাটানো যায়।

ট্যারিফ কমিশন বলছে, বর্তমান উৎস বিবেচনায় রসুনের ক্ষেত্রে চীনের বিকল্প নেই বললেই চলে। তবে বিশ্বের ১৫টি সর্বোচ্চ রসুন রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া (১১তম) ও মিসর (১২তম) রয়েছে। সেখান থেকে আমদানি করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ আদা রপ্তানিকারক ১৫ দেশের তালিকায় ভারত (২য়), ভিয়েতনাম (৭তম), পাকিস্তান (১৪তম) ও ইন্দোনেশিয়া (১৫তম) রয়েছে। সেখান থেকেও বাংলাদেশ আদা আমদানি করতে পারে।

জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারকেন্দ্রিক মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ বড় আকারের চীনা রসুন কিনতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ফলে এর চাহিদা থাকবেই। তবে এক মাস পর থেকে ভারতীয় রসুন আমদানি শুরু হবে। সেখানে নতুন মৌসুম শুরু হবে। এদিকে দেশীয় নতুন মৌসুমের রসুনও উঠতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজারে আদার দাম কমে গেছে। ভারতীয় আদা কেজি ৭৫-৮৫ টাকা ও মিয়ানমারের আদা ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দুই দেশ থেকে আদা আমদানি করে লোকসান গুনছেন আমদানিকারকেরা। 

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে রসুনের মৌসুম ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আদার মৌসুম ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাস। টিসিবির হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন আদার দাম ২৭ শতাংশ ও রসুনের দাম ১৭৭ শতাংশ বেশি। সবার চেয়ে এগিয়ে পেঁয়াজ, এক বছর আগের তুলনায় দাম বেশি ৩২২ শতাংশ।