পণ্য ও কাঁচামাল আমদানির বিকল্প উৎস থাকা দরকার

গাজী গোলাম মোর্তজা: উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, গাজী গ্রুপ
গাজী গোলাম মোর্তজা: উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, গাজী গ্রুপ
>

চীনের করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সভাপতি গাজী গোলাম মোর্তজা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার

প্রথম আলো: নববর্ষের ছুটির পর করোনাভাইরাসের কারণে চীনের ব্যবসা বেশ কয়েক দিন ধরে বন্ধ। ইতিমধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি উন্নতির কোনো বার্তা কি আপনারা পাচ্ছেন?

গাজী গোলাম মোর্তজা:করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কয়েকটি প্রদেশ ছাড়া চীনের অন্যান্য প্রদেশের লোকজন কাজে ফেরা শুরু করেছেন। ভাইরাসের কারণে সবাই কিছুটা সতর্ক হলেও প্রাথমিকভাবে তাঁরা কিন্তু উৎপাদন শুরু করেছেন। আমরা আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে।

প্রথম আলো: এই ভাইরাসের ব্যাপকতা আরও কিছুদিন থাকলে বিভিন্ন খাতে কাঁচামালসংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আপনার কী মত?

গাজী গোলাম মোর্তজা: করোনাভাইরাসের ব্যাপকতা যদি আরও কিছুদিন থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। তবে পোশাক ও বস্ত্র খাতের সুবিধা হচ্ছে, চীনের বাইরেও তাদের কাঁচামাল প্রাপ্তির বিকল্প উৎস রয়েছে। অনেক পোশাকশিল্পের মালিকই ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু করেছেন। সমস্যা বেশি হতে পারে আসলে আমাদের পণ্য রপ্তানিতে। আমরা চীনে অনেক পণ্য রপ্তানি করি।

প্রথম আলো:দেশে-বিদেশে কোনো রকম সংকট হলেই আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। করোনাভাইরাসের কারণে ইতিমধ্যে দেশে চীনা আদা-রসুনের দাম বেড়ে গেছে। এই অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে সরকারের কি বিশেষ নজরদারি দরকার?

গাজী গোলাম মোর্তজা:আমি মনে করি, সরকারের নজরদারি আছে। বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগের চেয়ে বেশ তৎপর। মসলার মধ্যে আমরা চীন থেকে মূলত আদা, রসুন ও দারুচিনি আমদানি করি। ডিসেম্বরে ১৮ মেট্রিক টন চীনা রসুন আমদানি হয়ে আছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার কিছু নেই। তা ছাড়া চীনের বাইরে থেকে রসুন আমদানির সুযোগ তো আছেই।

প্রথম আলো:গত কয়েক বছরে চীন থেকে পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি বেড়ে গেছে। চীন তথা একক দেশের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?

গাজী গোলাম মোর্তজা:প্রতিযোগিতামূলক দাম ও কম সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারার কারণেই চীন থেকে আমদানি বেড়েছে। চীন ও বাংলাদেশ খুব কাছাকাছি হওয়ায় পরিবহন খরচ কম পড়ে। তবে পণ্য ও কাঁচামাল আমদানির বিকল্প উৎস অবশ্যই থাকা দরকার। কারণ, অতিনির্ভরশীল বাজারে  সমস্যা দেখা দিলে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যদিও ভারত, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের উদ্যোক্তারা পণ্য আমদানি করছেন। তবে কম দাম ও দ্রুত পণ্য প্রাপ্তির শর্তে  চীনের বড় বিকল্প দেশ পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রথম আলো:চীন থেকে জাহাজে পণ্য আসতে বিলম্ব হচ্ছে। তাতে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দ্রুত পণ্য খালাসে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আছে কি না?

গাজী গোলাম মোর্তজা:চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারলে খুবই ভালো হয়। কারণ, চীনের পণ্য আসতে এমনিতেই কিছুটা বিলম্ব হবে। তারপর যদি বন্দরে জটিলতার কারণে কারখানায় পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, তাহলে শিল্প উদ্যোক্তাদের ক্ষতি আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি আশা করব, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে। বিশেষ করে যেসব পণ্য আসতে বিলম্ব হবে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের ব্যবস্থা করবে।

প্রথম আলো:বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাভাইরাসসহ নানা কারণে চীন থেকে ব্যবসা সরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সেসব বিনিয়োগ কি বাংলাদেশে আসার সুযোগ আছে?

গাজী গোলাম মোর্তজা: বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে কথা বলেছি। যখন চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করল, তখন আমাদের কাছেই অনেক চীনা ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সেসব বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুতগতিতে করছে। তবে অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে, সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরই ভালো বলতে পারবে।