ডিএসইএক্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান

শেয়ারবাজারের সূচক ও লেনদেনে চাঙ্গাভাব ফিরতে শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৩ সালে চালু হওয়ার পর এটি ডিএসইএক্স সূচকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি এ সূচকটি সর্বোচ্চ ২৩২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারকে চাঙা করতে গত সপ্তাহে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে আইন শিথিল করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সভা করে বাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে গত সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। এ নিয়ে চার কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ৩৪৮ পয়েন্ট বেড়ে আজ লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৩৪ পয়েন্টের অবস্থানে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৩০ পয়েন্ট।

সূচকের পাশাপাশি গতি ফিরছে লেনদেনেও। আজ ঢাকার বাজারে লেনদেন হয়েছে ৯১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৯৩২ কোটি টাকার সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে আজ।

গত ১৬ জানুয়ারি পুঁজিবাজার উন্নয়নে ছয়টি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নেয় সরকার। পরে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এসব পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওইদিনের বৈঠক শেষে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদক্ষেপের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে: পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণসুবিধার ব্যবস্থা করা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও দেশীয় বাজারে আস্থা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া। এর ধারাবাহিকতায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজার স্বাভাবিক করতে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি শেয়ারবাজারের এ বিনিয়োগকে নির্ধারিত সীমার বাইরে রাখা হয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ৭ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব সুযোগ দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

আর এসব পদক্ষেপে টানা চার দিন ধরে সূচক বাড়ছে পুঁজিবাজারে। গত চার কার্যদিবসে সূচক বাড়ল ৩৪৮ পয়েন্ট। লেনদেনেও ফিরেছে গতি। এক বছর পর ৯০০ কোটি টাকা ছাড়াল লেনদেন।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, আসলে পুঁজিবাজারকে প্রণোদনা দিতে ব্যাংকের বিনিয়োগের বড় সুবিধা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারের লেনদেনকে চাঙা করতে সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ডের দাবি করে বহুদিন ধরেই করে আসছিল মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার হাউসগুলো। আমরা এখন এটার কিছুটা প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। এগুলোর প্রভাবে বাজার ইতিবাচক। তবে বহুদিন দরে দর পতনে ও অস্থিতিশীলতায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। ওটা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। তবে নানামুখী পদক্ষেপ আমরা দেখছি, বাজার এখন ইতিবাচক।

ডিএসইতে আজ হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯৩টির, কমেছে ৪০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৩টির দর।

ডিএসইতে আজ লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সামিট পাওয়ার, এস এস স্টিল, সিঙ্গারবিডি ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড।

ডিএসইতে আজ দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো ওরিয়ন ইনফিউশন, এসিআই ফরমুলেশন লিমিটেড, সায়হাম টেক্সটাইল, ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো, আফতাব অটো, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, এসিআই, এস আলম কোল্ড রোলড স্টিল মিলস ও প্রিমিয়ার সিরামিকস।

ডিএসইতে আজ দর কমার শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো অল টেক্সটাইল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্স, সমতা লেদার, সাভার রিফ্যাক্টরিজ লিমিটেড, তুংঘাই, ইমাম বাটন, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, দুলামিয়া কটন ও ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান।

অন্যদিকে, সিএসইতে হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২১৪টির, কমেছে ৩৭টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৭টির দর।