উদ্যোক্তা হতে প্রশিক্ষণ নিতে চান?

চাকরির পাশাপাশি ছোট পরিসরে বুটিকের ব্যবসা শুরু করেন নার্গিস আহমেদ। পরে ২০০৭ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, ফ্যাশন ডিজাইন, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসার পরিসর বাড়ান। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুরে তাঁর দুটি কারখানায় পাটের নানা ধরনের পণ্য উৎপাদিত হয়। সেসব পণ্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আটটি দেশে রপ্তানি হয়। ৯টি মন্ত্রণালয়ে পাটের পণ্য সরবরাহ করেন তিনি। 

আনাস ফ্যাশন বুটিকসের স্বত্বাধিকারী নার্গিস আহমেদ বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখেছি। ক্রেতা খুঁজে পেতেও সহায়তা করেছে তারা। সব মিলিয়ে আজকের অবস্থানে আসার পেছনে বড় অবদান এসএমই ফাউন্ডেশনের।’ 

নার্গিস আহমেদের মতো বেশ কয়েক হাজার নারী ও পুরুষের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটা এমনই। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা ব্যবসা শুরু করেছেন কিংবা ব্যবসার পরিসর বড় করেছেন। অনেকে আবার প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসার কাঠামোগত পরিবর্তন এনেছেন। উদ্যোক্তার সঙ্গে ক্রেতাদের সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। 

এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, বিদায়ী অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাঁরা। ঢাকাসহ সারা দেশে বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ হয়। ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দিয়ে যে কেউ প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তবে অধিকাংশ প্রশিক্ষণে ট্রেড লাইসেন্সধারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। 

ফাউন্ডেশনের এইচআরডি বিভাগ ৪২টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ করায়। তার মধ্যে অন্যতম উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, বিপণন, ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি, ব্লক-বাটিক, ফ্যাশন ডিজাইন, বিউটিফিকেশন ও পারলার ব্যবস্থাপনা, কৃত্রিম ফুল তৈরি, ফাস্ট ফুড তৈরি, বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প, আমদানি-রপ্তানি, এসএমই উদ্যোক্তাদের ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা, চামড়াজাত পণ্য তৈরি, আধুনিক বাজারজাতকরণ কৌশল, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বিএসটিআইয়ের সনদ পাওয়ার পদ্ধতিবিষয়ক প্রশিক্ষণ। গত আট বছরে ১৬ হাজার উদ্যোক্তা ৪২টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। 

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণগুলো তিন থেকে ছয় দিনের হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যবসায়িক সংগঠন, জেলা ও উপজেলা চেম্বারের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে এসএমই ফাউন্ডেশন। ব্যক্তিগতভাবে কেউ প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আবেদন করলে তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রতিবছরের জানুয়ারি ও জুনে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আবেদন নেওয়া হয়। 

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনে প্রোগ্রাম আছে। এ প্রোগ্রামের অধীনে শিক্ষার্থী ও গৃহিণীদের উদ্যোক্তা বানাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে ব্যবসায় আছেন এমন নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, ব্যাংকঋণ প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাব প্রস্তুত, আধুনিক মার্কেটিং, জুয়েলারি তৈরি, ন্যাচারাল ডায়িং, পাট ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত, ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, ব্যবস্থাপনার কৌশলসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ করে দেওয়ার সুবিধা তো আছেই। 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ডিজিটাল ব্যবসা শুরু করবেন কীভাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবসা এবং পণ্যের ডিজিটাল মার্কেটিং—এই তিন বিষয়ে তিন থেকে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ হয়। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ২৮টি প্রশিক্ষণে অংশ নেন প্রায় ৬০০ জন উদ্যোক্তা।