শিল্পেরও রাজধানী হতে চায় চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরী। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরী। ছবি: প্রথম আলো

শিল্পনগর বলতে যা বোঝায়, দেশে তার একটিও গড়ে ওঠেনি। অন্তত এখন পর্যন্ত। অবশ্য একটি তৈরি হচ্ছে, নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। চট্টগ্রাম বিভাগের ভেতরে বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠার পথে থাকা এ শিল্পনগর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে। কার্যত শিল্পেরও রাজধানী হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। 

দেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সরকার ঠিক করেছে, তার আওতায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে তোলা হচ্ছে। শুরুতে চিন্তা ছিল, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনী ও সীতাকুণ্ডে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা। সেই উদ্যোগ পরে শিল্পনগরের চিন্তায় পরিণত হয়। নাম দেওয়া হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এ ঘটনা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। 

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সংস্থাটি জানিয়েছে, এর আয়তন হবে ৩০ হাজার একরের বেশি। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে আরও ১০ হাজার একরের মতো জমি নেওয়া হচ্ছে, যা পরে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে যুক্ত হবে।

শুধু শিল্প নয়, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে পূর্ণাঙ্গ শিল্পশহর। এতে কারখানার পাশাপাশি আবাসন, বিনোদন ও অন্যান্য সেবা থাকবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এখন ভূমি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিচ্ছে সরকার।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের জন্য আলাদা একটি বন্দর থাকবে, যেটি দিয়ে সহজেই চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরণি নামে চার লেনের সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে, যেটি পরবর্তীকালে আট লেন করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি উঁচু বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, যা সাগরের পানি থেকে সুরক্ষা দেবে শিল্পকে।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সরকারি সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) প্রায় ১ হাজার ৫৫ একর জমি দিয়েছে বেজা। ভারতও সেখানে ১ হাজার একর জমি নিচ্ছে। এ জমিতে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা জমি পেতে আবেদন করেছে। দেশি বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো সেখানে জমি নিয়েছে। ৫০০ একর জমি পেয়ে আরও জমির আবেদন জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমএই।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে এককালীন ৫০ বছরের ভাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার অনুন্নত জমির ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩০ ডলার এবং উন্নত জমির মূল্য ধরা হয়েছে দশমিক ৬০ ডলার। বেজা জমির ভাড়া বাড়ানোর চিন্তাও করছে।

সেখানে জমি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে বেজা। ইতিমধ্যে সেখানে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে জমি নিয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানি। এখন বেশ কয়েকটি কোম্পানি কারখানা তৈরির কাজ করছে। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে শিল্পকারখানা করার বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। 

অবশ্য শুধু বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর নয়, চট্টগ্রাম বিভাগে আরও অনেক কিছু হচ্ছে। যেমন কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ করছে সরকার। বিভাগীয় শহর হিসেবে এ প্রকল্পও চট্টগ্রামের গুরুত্বই বাড়াবে।

মহেশখালী কার্যত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কেন্দ্রে চলে আসছে। এ উপজেলায় একটি সমুদ্রবন্দর, ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, জ্বালানি তেলের পাইপলাইন ও পেট্রোলিয়াম কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা।   

মহেশখালী কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। এর আয়তন ৩৬২ বর্গকিলোমিটার। এটি মহেশখালী চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানকার সমুদ্রের গভীরতা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। 

বেজা মহেশখালীতে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঠিক করেছে; যার মধ্যে একটিতে জমি বরাদ্দও চলছে। সব মিলিয়ে জ্বালানি ও ভারী শিল্পের কেন্দ্র হয়ে উঠছে মহেশখালী। 

পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির বড় অংশের কার্যক্রম চলবে চট্টগ্রাম বিভাগে। বিভাগীয় শহর হিসেবে রোশনাই বাড়বে চট্টগ্রামের।