ঋণের সুদ হার বেঁধে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী এপ্রিল থেকে নতুন সুদ হার কার্যকর হবে। এর ফলে নতুন ও পুরোনো সব ধরনের ঋণে সুদ হার হবে ৯ শতাংশ। তবে সুদ কমানোর পরও কোনো ঋণ খেলাপি হলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রাতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী ‘জনস্বার্থে’ এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ১৯৯০ সালের আগের ব্যাংক ব্যবস্থায় ফিরে গেল বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে আগামী এপ্রিল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি ভোক্তা ঋণ, এসএমই খাত, আবাসনসহ সব ধরনের ঋণের সুদ হার কমে আসবে। বর্তমানে যেসব ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে, আগামী এপ্রিল থেকে তাও কমে আসবে। বর্তমানে অনেক ঋণে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ কার্যকর রয়েছে। নতুন নির্দেশনার ফলে এসএমই খাতের উৎপাদন শিল্পের ঋণ যাতে কমে না আসে, এ জন্য উৎপাদন শিল্পের ঋণের স্থিতি গত তিন বছরের গড় হারের চেয়ে কোনোভাবেই কম হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও ভোক্তা ঋণের সুদ ৯ শতাংশের বাইরে রাখা হবে। নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের চেয়ে ভালো জানেন, কেন করেননি। আমরা আবারও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করব।’

বিষয়টি কি ব্যাংক খাতের জন্য হতাশাজনক হলো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই হতাশাজনক।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদ উচ্চ মাত্রার হলে সংশ্লিষ্ট শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনো কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতারা যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে করতে পারেন না। এতে ব্যাংক খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে সুদ হার বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বেশ কিছু লক্ষ্যও তুলে ধরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে- শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক সক্ষমতা অর্জন, শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। সোমবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সুদের হার ৯ শতাংশ কার্যকর করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংকগুলো এটি কার্যকর করলে বেসরকারি খাত বিকশিত হবে।’

গত ডিসেম্বরে ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও এবিবির সঙ্গে এক বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হবে। আর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে আমানতের সুদ হবে ৬ শতাংশ। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এমন সিদ্ধান্তের পর চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতে সুদ হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকগুলো। তবে সব ব্যাংক এখনো কমায়নি।