ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন সহজতর করতে হবে

‘অ্যাকশন ফ্রেমিং কনফারেন্স: ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য অর্থবাজার রূপান্তরকরণ’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
‘অ্যাকশন ফ্রেমিং কনফারেন্স: ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য অর্থবাজার রূপান্তরকরণ’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে দেশের জিডিপিতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতে যা প্রায় ৮০ শতাংশ। চীনে ৬০ শতাংশ। জিডিপিতে এসএমইয়ের অবদান বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন সহজতর করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সহায়ক নিয়ন্ত্রণকাঠামো ও আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন। এ ছাড়া বিকল্প সরবরাহ মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকশন ফ্রেমিং কনফারেন্স: ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য অর্থবাজার রূপান্তরকরণ’ শীর্ষক সম্মেলনে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে এই সম্মেলনের আয়োজন করে বিজনেস ফাইন্যান্স ফর দ্য পুওর ইন বাংলাদেশ (বিএফপি-বি)।

বিএফপি-বি একটি আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচি, যা ইউকেএইডের অর্থায়নে নাথান অ্যাসোসিয়েটস দ্বারা পরিচালিত। যারা মূলত বাংলাদেশ সরকার, সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাণিজ্যিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করেছে। ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড সমমানের ৫ বছরের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে।

এই কর্মসূচির আওতায় ১২ লাখ অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৩ লাখের বেশি নারী উদ্যোক্তার এমএসই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ১১ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ১ হাজারের বেশি কৃষককে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা হয়েছে।

দিনব্যাপী সম্মেলনে চারটি ভিন্ন ভিন্ন সেশনে প্যানেল আলোচনা হয়। যেখানে বক্তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর্থিক উন্নতির জন্য ডিজিটাল রূপান্তরকরণের বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়াও নীতি সংস্কার ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে আরও কার্যকর এবং বিনিয়োগের জন্য মিশ্র অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরিসহ বাজারের সুবিধাভোগীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি চারজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মাত্র একজন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক সহায়তা পান। উদ্ভাবনের দিক থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৪১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায় খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি গ্রামীণ অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়েছে। বিকাশকে বাধা দেয় এমন তথ্যগত দূরত্ব পূরণের প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করেছে। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক বোধগম্য এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি আস্থা অর্জনের গুরুত্ব এবং সামগ্রিক বাজারের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিএফপি-বি প্রকল্প প্রধান আহমেদ জামাল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বিগত দশকে ক্ষুদ্র উদ্যোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ইতিবাচক পরিবর্তন এবং এর প্রভাব নিয়ে কথা বলেন।

বিএফপি-বির টিম লিডার ফয়সাল হুসেন উপস্থাপিত ‘মুভিং দ্য নিডল অন ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’ এর ওপর বক্তব্য রাখেন। তিনি বিএফপি-বির সাফল্য এবং কর্মসূচিটি বাস্তবায়নের সময় শেখা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জ্যেষ্ঠ সচিব আছাদুল ইসলাম, ডিএফআইডির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জিম ম্যাকআলপাইন এবং লন্ডনের নাথান অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমন ক্যাসিডি।

সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্ভাবকদের পুরষ্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিমা কোম্পানির নীতিনির্ধারক ও প্রতিনিধি ছাড়াও গবেষকেরা অংশ নেন।