দেশের সবচেয়ে বড় কেক-এ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মদিন উদ্যাপন

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা এবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কেক কেটে উদ্‌যাপন করে জন্মদিন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা এবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কেক কেটে উদ্‌যাপন করে জন্মদিন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ছোট্ট রাতুল, রফিক, মুনিরা ও বর্ষা। ওদের সবার বয়সই ৮ থেকে ১০ বছর। ‘বলো তো, তোমাদের কার জন্মদিন কবে?’ জিজ্ঞেস করতেই অবাক হয়ে তাকায় ওরা। একজন কী যেন মনে পড়তেই চট করে বলে ওঠে, ‘আমার জন্ম বর্ষাকালে, সেই জন্যিই দাদি নাম রাখছিল বর্ষা’। ব্যস, এতটুকুই! তারপর একে একে জানা যায়, জন্মদিনের উৎসব তাদের কোনো দিনই উদ্‌যাপন করা হয়নি। মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটা দেখেছে নাটকে বা সিনেমায়। ওদের চকচকে চোখের দীপ্তি আর হাস্যোজ্জ্বল মুখের কথাগুলো শুনতে শুনতেই ভারী হয়ে ওঠে বুকটা, মনের অজান্তেই জমে ওঠে জল, চোখের কোনায়। এই সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা এবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কেক কেটে উদ্‌যাপন করল জন্মদিন।

আনন্দঘন পরিবেশে শিশুদের প্রাণখোলা হাসিতে মুখর ছিল দিনটি। দেশবরেণ্য শেফদের বানানো কেক আর নানান আয়োজনে একটি স্মৃতিময় দিন পার করে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা। বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন এই প্রথম। নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের এমন ভিন্নধর্মী আয়োজনে পথশিশুরা পেয়েছে জন্মদিনের উপহার। গত মঙ্গলবার এ আয়োজন অংশগ্রহণকারী শিশুদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাজধানীর ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে এ আয়োজনে শিশুদের জন্য ছিল বিনোদনের নানান উপকরণ।

যে ভাবনা থেকে এ আয়োজন
অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুর বাস এ শহরে; যারা জন্মদিনের উৎসব উদ্‌যাপন করতে পারেনি কখনোই। এই পথশিশুদের কথা বিবেচনা করেই, তাদের জীবনে আনন্দের ছোঁয়া এনে দিতে টিকেসিআইয়ের সহযোগিতায় নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড আয়োজন করে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কেক-এ আমাদের জন্মদিন উৎসব’। এ আয়োজনের জন্য তৈরি করা হয় ৬২০ পাউন্ডের বড় একটি কেক। সুস্বাদু ডেজার্ট তৈরিতে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড ডিপ্লোমা দিয়ে তৈরি করা হয় এই কেক।

সুবিধাবঞ্চিত যেসব পথশিশু নিজেদের জন্মদিন জানে না বা ভুলে গেছে, তাদের ৪০ জনকে নিয়েই ছিল এ আয়োজন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সুবিধাবঞ্চিত যেসব পথশিশু নিজেদের জন্মদিন জানে না বা ভুলে গেছে, তাদের ৪০ জনকে নিয়েই ছিল এ আয়োজন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

অতিথি-আয়োজকদের গল্প
পুরো অনুষ্ঠান হয় নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়নে। অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন নিউজিল্যান্ড ডেইরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ মল্লিক, মায়ের আঁচল শেল্টার হোমসের চেয়ারম্যান ক্রিচিয়ান রেয়মন্ড।

এস এ মল্লিক বলেন, ‘এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মনে যদি সামান্য আনন্দের জোগান দিতে পারি, তবেই আয়োজন সার্থক হবে। নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের সুনাম সবারই জানা, তবুও এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের কাছে এর স্বাদ পৌঁছায়নি। বাংলাদেশে দুগ্ধজাত পণ্য তৈরিতে নিউজিল্যান্ড ডেইরির গুণগত মান আর অতুলনীয় স্বাদ থেকে যারা বঞ্চিত, তাদের কথা ভেবেই এই সামান্য আয়োজন।’

নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ভিন্নধর্মী আয়োজনে পথশিশুরা পেয়েছে জন্মদিনের উপহার। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ভিন্নধর্মী আয়োজনে পথশিশুরা পেয়েছে জন্মদিনের উপহার। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

আয়োজনের আদ্যোপান্ত
কেক কাটার পাশাপাশি শিশুদের জন্য আকর্ষণ হিসেবে ছিল ম্যাজিক শো, বিভিন্ন গেমসসহ আরও অনেক আয়োজন। সকাল সাড়ে ১০টায় ডিপ্লোমা দিয়ে তৈরি ৬২০ পাউন্ডের কেকটি ডিসপ্লের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমনে আয়োজনে যোগ হয় নতুন মাত্রা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল ৪০ জন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু, যাদের জন্য এত বড় আয়োজন করা হয়। তাদের উপস্থিতিই ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ।

বড় কেক তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল ডিপ্লোমা মিষ্টি লড়াই সিজন-৬–এর ৪০ জন প্রতিযোগী। প্রতিযোগীদের নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সম্মানসূচক সার্টিফিকেট। পথশিশুদের জন্য আয়োজিত এ জন্মদিনে দেশের সবচেয়ে বড় কেক কাটার সঙ্গে তাদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয় নতুন জামা, যা এই শিশুদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

দুপুরের পর অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান রাজিব সরকারের ম্যাজিক শো, শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন খেলার আয়োজন ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। বিকেল চারটায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যার জন্য এত আয়োজন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। শিশুদের জন্য এ অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছিল এক মিলনমেলা। এক দিনের জন্য হলেও ভুলে গিয়েছিল যে তারা সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু! কয়েকজনের অনুভূতি জানতে চাইলে আবেগে এবং কান্নায় তাদের চোখ ভিজে যায়। এমন আয়োজন যেন তাদের কাছে অলীক গল্প। বঞ্চিত শিশুদের চোখে–মুখে এ আনন্দের হাসি দেখে সত্যি বুকটা ভরে ওঠে। এই ছোট ছোট ভালো লাগার অনুভূতিগুলো নিয়ে বেড়ে উঠুক পথশিশুরা, এমনটাই প্রত্যাশা।