মালদ্বীপ শ্রমবাজারে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় ৪০ হাজার কর্মী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বজলু মিয়া। গত জানুয়ারি সেখানকার একটি ভবন থেকে পড়ে হাত–পা ভেঙে যায় তাঁর। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালেও চিকিৎসার খরচ দেয়নি। অনিবন্ধিত (অবৈধ) শ্রমিক হওয়ায় এ নিয়ে অভিযোগ করারও উপায় ছিল না তাঁর। পরে স্থানীয় প্রবাসীরা চাঁদা দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

মালদ্বীপে অবস্থান করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বজলু মিয়ার মতো অবৈধভাবে যাঁরা দেশটিতে যাচ্ছেন তাঁরা নানা বিপদের মুখে পড়ছেন। অনেকের কাজ জুটছে না। অনেকে কাজ পেলেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। আবার গ্রেপ্তার–আতঙ্কেও থাকতে হয়। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে মালদ্বীপ। এতে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক।

গত বছরের শুরুর দিকে মালদ্বীপের অভিবাসন বিভাগ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, দেশটিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৭ জন বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে ৬৩ হাজার কর্মীই অবৈধ। নতুন করে আরও কর্মী ঢুকতে থাকায় ৪ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ২ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিকের অবস্থান করার শঙ্কা তৈরি হয়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির অভিবাসন বিভাগ এক বছরের জন্য বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়।

মালদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশটিতে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন, যাঁর মধ্যে ৪০ হাজারই অবৈধভাবে রয়েছেন। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করতে বলেছে মালদ্বীপ। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার শ্রমিক আবেদনও করেছেন।

>

মালদ্বীপে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৭ জন বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন
এর মধ্যে ৬৩ হাজার কর্মীই অবৈধ
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে মালদ্বীপ
অবৈধভাবে যাঁরা দেশটিতে যাচ্ছেন, তাঁরা নানা বিপদে পড়ছেন
অনেকের কাজ জুটছে না

মালদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিভাগের কর্মকর্তা (ফার্স্ট সেক্রেটারি) মো. সোহেল পারভেজ গত বুধবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত বৈধ হতে কত শ্রমিক আবেদন করেছেন, তার হিসাব দূতাবাসের কাছে নেই। এর কারণ অবৈধ শ্রমিকদের সরাসরি মালদ্বীপ সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়।

এদিকে বৈধ হওয়ার চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যেই অনেকে আউটপাস (ভ্রমণের বৈধ অনুমতিপত্র) নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। তাঁদের কেউ সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছেন আবার কেউ চাকরি না পেয়ে দেশে ফিরে আসছেন। ৭ ফেব্রুয়ারিও ৮০ বাংলাদেশিকে আটক করেছে মালদ্বীপের পুলিশ। মূলত যাঁরা বৈধ হওয়ার জন্য এখনো আবেদন করেননি, তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক এবং মালদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে আউটপাস নিয়ে মালদ্বীপ থেকে ফিরে আসেন ৫৯৬ জন। ২০১৭ সালে ৯৩১ জন এবং ২০১৮ সালে ফিরে আসেন ১ হাজার ৩২০ জন। গত বছর প্রায় ২ হাজার ৭০০ কর্মী আউটপাস নিয়েছেন। এর মধ্যে গত বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) আউটপাস নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার জন। আর শেষ ছয় মাসে (গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর) আউটপাস নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কর্মী।

মালদ্বীপে বাংলাদেশি বৈধ–অবৈধ কর্মীদের সহায়তা দিয়ে থাকে বিভিন্ন সংগঠন। এ রকম একটি সংগঠন হচ্ছে ‘আমরা মালদ্বীপ প্রবাসী জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’। এই সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, মালদ্বীপে অবকাঠামো নির্মাণ ও পর্যটনসেবা খাতেই (হোটেল, রেস্তোরাঁ) অধিকাংশ বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশিরা বেশি হলেও পর্যটন খাতের কর্মীদের বেশির ভাগ ভারতের কর্মী। অবকাঠামো খাতের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারেন না।

প্রবাসীরা জানান, দালালের প্রলোভনে পড়ে অনেকেই ‘ফ্রি ভিসার’ নামে এসে এখনো কোনো কাজ পান না। কেউ কেউ এক বছরের ভিসা নিয়ে আসার পর আর নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ হয়ে যান। আবার কেউ কেউ ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে পালিয়ে থেকে যান।

মালদ্বীপ প্রবাসী জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুল্লাহ কাদির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ শ্রমিকদের দুর্দশা
বেশি। অবকাঠামো নির্মাণ খাতেই তাঁরা বেশি কাজ করেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। মারা গেলেও কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। দালালের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে মালদ্বীপে যাতে কেউ না আসেন, সে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।