নলডাঙ্গায় পেঁয়াজের কেজি ২৫ থেকে ৭০ টাকা হলো যেভাবে

নাটোরের নলডাঙ্গা হাটে উঠেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। ছবি: মুক্তার হোসেন
নাটোরের নলডাঙ্গা হাটে উঠেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। ছবি: মুক্তার হোসেন

নাটোরের নলডাঙ্গা হাটে পেঁয়াজের দাম গত শনিবার ৩০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে নেমে আসে। দুই দিন পর আজ মঙ্গলবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৭০ টাকায়। পেঁয়াজের অস্থির বাজার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

নাটোর শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমের উপজেলা নলডাঙ্গার পেঁয়াজের বাজারটি। অঞ্চলটিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয় ব্যাপক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের ফুল তরকারি খাওয়ার জন্য আগেই তুলে ফেলা হয়। এর ফলে এ পেঁয়াজের মাথায় একটি গুটি থাকে। সে জন্য একে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বলে। এটি সংরক্ষণ করা যায় না বেশি দিন। পচে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকেরা তাই এটি তাড়াতাড়ি তুলে ফেলেন।

নলডাঙ্গা হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। এই দুই দিনে পেঁয়াজচাষিরা হাটের পেঁয়াজ মোকামে বিক্রি করতে আসেন। বাইরের পাইকারেরা মোকাম থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে চলে যান ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুরসহ অন্তত ১০টি জেলায়। গত মঙ্গলবারের (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাটে গড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। তিন দিনের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ শনিবারের (২৯ ফেব্রুয়ারি) হাটে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। অথচ আজ সকালে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এত বেশি ওঠা–নামা করায় এখানকার ক্রেতা-বিক্রেতাসহ চাষিরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। কেউ বেশি দামে বিক্রি করে আনন্দ পাচ্ছেন। কেউ কম দামে বিক্রি করে আফসোস করছেন।

আজ সকাল সাড়ে সাতটায় নলডাঙ্গা হাটে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের আমদানির তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। চাষিরা বস্তাভর্তি পেঁয়াজ হাটে নামা মাত্রই পাইকারেরা কিনে নিচ্ছেন আড়তে। সকাল ১০টা বাজার আগেই সব পেঁয়াজ বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়।

নলডাঙ্গা বাজারের চলেছ পেঁয়াজ বিকিকিনি। ছবি: প্রথম আলো
নলডাঙ্গা বাজারের চলেছ পেঁয়াজ বিকিকিনি। ছবি: প্রথম আলো

হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক ওঠা–নামা করার কারণ জানতে চাইলে আড়তদার মোস্তফা মাসুদ জানান, এক মাস ধরে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেচাকেনা হচ্ছে। এই পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। তাই চাষিরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত করছেন। ১৫ দিন আগে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। তখন দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।

মোস্তফা মাসুদ বলেন, তিন দিনের ব্যবধানে শনিবার পেঁয়াজের আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এতে হঠাৎ দর অর্ধেকে নেমে আসে। এই কয় দিনে চাষিদের অধিকাংশ পেঁয়াজ ওঠানো হয়ে গেছে। তাই আজ হাটে পেঁয়াজের আমদানি কম হয়েছে। অথচ দাম কমে যাওয়ার খবর শুনে পাইকারি ক্রেতার আগমন বেড়ে গেছে। ফলে মঙ্গলবারের হাটে চড়া দরে পেঁয়াজ বেচাকেনা হচ্ছে। আড়তে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে।

হাটের শামীম ট্রেডার্সের মালিক লুৎফর রহমান বলেন, পেঁয়াজের দাম দ্রুত ওঠা–নামার পেছনে গণমাধ্যমকর্মীদের দায় রয়েছে। কারণ, দাম কমার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে হাটে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়। বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেন।

পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, চাষিদের মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা প্রায় শেষের পথে। এ কারণে এখন নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম বাড়তে থাকবে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পরই চারা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন দাম স্বাভাবিক হবে। কারণ ওই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সহজ। চাষিরা ধীরে ধীরে পেঁয়াজ হাটে তুলবেন।

নলডাঙ্গা ট্রাক বন্দোবস্ত কার্যালয়ের প্রতিনিধি মো. বুলবুল বলেন, প্রতি হাটে এখানে ১৫০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ কেনাবেচা হচ্ছে। চারা পেঁয়াজ ওঠা শুরু হলে বেচাকেনা বেড়ে যাবে। তিনি এ সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ দেন।