১৮৫৭ সালে প্রথম আয়কর আরোপ

জেমস উইলসন
জেমস উইলসন

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের পর ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজদের কোষাগারে প্রচণ্ড অর্থসংকট দেখা দেয়। রাষ্ট্রীয় খরচ মেটানো দায় হয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে ১৮৬০ সালে এ উপমহাদেশে প্রথম আয়করের ইতিহাসের যাত্রা শুরু। ভারতের প্রথম ফাইন্যান্স মেম্বার জেমস উইলসন আইনসভায় আয়কর বিল উত্থাপন করেন। পরে তা আইনসভায় পাস করেন ইংরেজ শাসকেরা। ওই আয়কর আইনে ২০০ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়করমুক্ত ছিল। তখন ২০০ থেকে ৪৯৯ টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ এবং এর বেশি আয় হলে ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। তবে কৃষি খাতের আয় ৬০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত ছিল।

পরের পাঁচ বছর এই আইনটি বলবৎ ছিল। এই সময়ে আয়কর আইনটি নিয়ে জনগণের ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে। সরকারও উপলব্ধি করে, সিপাহি বিপ্লবের পরের যে আর্থিক সমস্যা ছিল, এর প্রায় সমাধান হয়ে গেছে। তাই আয়কর আইনটির আর প্রয়োজন নেই। পরের দুই বছরের জন্য আইনটি স্থগিত করা হয়।

কিন্তু ১৮৬৭ সালে এসে আবার বাজেট ঘাটতিতে পড়ে তৎকালীন সরকার। তখন বাধ্য হয়ে ভারতের আইনসভা আবার আরেকটি আয়কর আইন করে। তখন করের হার হ্রাস করে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ করা হয়। আর ৫০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত করা হয়। এই আইনে কৃষি খাতের আয়কে করমুক্ত রাখা হয়। এ আইনটিও ১৮৭৩ সালে বাতিল করা হয়। ১৮৭৭-৭৮ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে আবারও আইনটি বলবৎ করা হয়। এই সময়ে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিলে কর দিতে হতো। পরে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত নানা ধরনের সংশোধনের পর ওই আয়কর আইনে কর আদায় করা হতো। অবশ্য ১৮৮০ থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আইনের পাশাপাশি তৎকালীন বেঙ্গল, মাদ্রাজ ও বোম্বে প্রদেশের জন্য নিজস্ব আয়কর আইন প্রণয়ন করা হয়। এই সময়ে কর–সংক্রান্ত ২৩টি আইন প্রণয়ন করা হয়।

১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ইংরেজরা নতুন আয়কর আইনটি ব্যাপকভাবে সংশোধন করে। করের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন বছরে আয় ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা হলে টাকায় ৪ পাই; ২০০১ থেকে ৫০০০ টাকার ওপর টাকায় ৫ পাই; ৫০০১ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত টাকায় ৬ পাই; ১০০০১ থেকে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত টাকায় ৯ পাই এবং ২৫০০০ টাকার বেশি হলে টাকায় ১২ পাই কর নেওয়া হতো।

এখন যেমন বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে ৩০ শতাংশ হারে সুপার ট্যাক্স কাটা হয়, ইংরেজ আমলেও এমন সুপার ট্যাক্স চালু করা হয় ১৯১৭ সালে। তখন বছরে ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় হলে সুপার ট্যাক্স দিতে হতো।

তবে রাজস্বসংক্রান্ত সব কটি আইনকে এক করে ১৯২২ সালে প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ আয়কর আইন প্রণয়ন করে ইংরেজ সরকার। এই সময়ে একটি রাজস্ব বোর্ডও গঠন করা হয়। কর কমিশনার, সহকারী কর কমিশনার, আয়কর কর্মকর্তা—এসব পদ সৃষ্টি করা হয়। ১৯২২ সালের আইনটি দিয়ে স্বাধীনতার পরও এ দেশে চালু ছিল। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গঠন করে সরকার। সময়ের পরিক্রমায় প্রতিবছর নানা ধরনের সংশোধনের কারণে ওই আইনটি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এই আইনটি পরিবর্তনের তাগিদ অনুভূত হচ্ছিল। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে নতুন আয়কর অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সেটিও নানা পরিবর্তনে জটিল ও দুর্বোধ্য পড়েছে। এখন সরকার নতুন করে আবার আয়কর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র: বাংলাদেশের আয়কর আইন