প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাজ করছে স্কয়ারে

পাবনায় স্কয়ারের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা
পাবনায় স্কয়ারের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা

পাবনায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানায় প্রথম ট্রাক আসে ১৯৬৫ সালে। তখন চালক হিসেবে যোগ দেন ইয়াছিন আলী খন্দকার। দীর্ঘদিন কাজ করার পর অবসর নেন তিনি। ১৯৯০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর যোগ দেন ছেলে কামাল খন্দকার। বর্তমানে তিনিও অবসরের পথে। ইতিমধ্যে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজে টেকনিশিয়ান পদে যোগ দিয়েছেন তাঁর ছেলে সজীব খন্দকার।

৬২ বছরের পুরোনো স্কয়ার গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় মানুষ এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাজ করছেন। একটি–দুটি নয়, এমন উদাহরণ অসংখ্য। গত বুধবার পাবনা শহরের শালগাড়িয়া মহল্লায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, উত্তর শালগাড়িয়া মহল্লায় স্কয়ার টয়লেট্রিজ এবং স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় ঘুরে এমনটাই জানা গেল।

পাবনাতেই স্কয়ার গ্রুপের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সেখানকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় দশ হাজার কর্মী। তাঁরা যেমন প্রতিষ্ঠানটিকে ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধেছেন, তেমনি উদ্যোক্তারাও কর্মীদের জন্য নিয়েছেন অন্যান্য উদ্যোগ। সেটি কেমন? আট ঘণ্টার প্রত্যেক শিফটে কর্মীরা এক বেলা খাবার পান বিনা মূল্যে। নারী কর্মীদের কারখানায় আসা–যাওয়ার জন্য আছে পরিবহন সুবিধা। মায়েরা যেন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন, সে জন্য শিশু দিবা যত্নকেন্দ্র রয়েছে। কর্মীদের পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে।

সকালে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানা ফটক দিয়ে ঢুকতে চোখে পড়ল সাজানো–গোছানো পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। খোলা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। কারখানার ভেতরে ঝকঝকে তকতকে। নির্দিষ্ট পোশাক পরে নারী–পুরুষ কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। এতটুকু শব্দ নেই। অথচ সবকিছু ঘড়ির কাঁটার মতো এগিয়ে চলেছে।

দুপুরের দিকে আমরা স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় যাই। তখন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাসে দ্বিতীয় শিফটের কর্মীরা আসছেন। তবে সবার প্রথম গন্তব্য খাবার ঘর—মাতৃছায়া। ২০১২ সালের ৫ মে প্রায় ১ হাজার আসনের বিশাল এই খাবার ঘর উদ্বোধন করেন স্কয়ার মাতা (স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী) অনিতা চৌধুরী। কর্মীরা নির্ধারিত কাউন্টার থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছেন। ৩০ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় শিফটের খাওয়া শেষ। ঠিক ১টা ৩০ মিনিটে প্রথম শিফটের কর্মীরা কারখানা থেকে বেরিয়ে সোজা খাবার ঘরে চলে এলেন। আবার ৩০ মিনিটের খাওয়া পর্ব। তারপর বেলা দুইটায় বাসে করে বাড়ির পথ ধরলেন প্রথম শিফটের কর্মীরা।

স্কয়ারে ১৯৬৮ সাল থেকে কাজ করেন দবির উদ্দিন আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি স্কয়ার ফার্মসিউটিক্যাল লিমিটেডের আবাসিক উপদেষ্টা। বললেন, স্কয়ার মাতা অনিতা চৌধুরী কর্মীদের সন্তানদের মতো ভালোবাসেন। তাঁর ইচ্ছাতেই কারখানায় খাবার তৈরি শুরু হয়। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শ্রমিক—সবাই একই খাবার খাচ্ছেন।

ফেরার সময় স্কয়ার টয়লেট্রিজের মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল হান্নান বললেন, স্কয়ার পাবনায় একটি সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে। নতুন নতুন কারখানা করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করছে। নারীর ক্ষমতায়নে অনেক অবদান রাখছে। জেলায় প্রথম নারীদের পরিচালনায় একটি পেট্রলপাম্প চালু করেছে স্কয়ার। অনিতা-স্যামসন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসার বাইরে অবদান রাখছে স্কয়ার গ্রুপ। তাদের অর্থায়নে জেলার ১২৯ বছরের প্রাচীন গণগ্রন্থাগার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির ছয়তলা ভবন হয়েছে। জেলার একমাত্র মিলনায়তন বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে অবদান রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।