'ধরেই নেওয়া হয়েছিল ডাক বিভাগের কবরে যাওয়ার সময় হয়েছে'

মোস্তফা জব্বার। ফাইল ছবি
মোস্তফা জব্বার। ফাইল ছবি

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, একসময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে ডাক বিভাগের কাফনের কাপড় পরে কবরে যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু এখনকার পদক্ষেপগুলো ভিন্ন চিন্তা তৈরি করেছে। ডাক বিভাগ এখন রূপান্তরিত হচ্ছে ডিজিটাল ডাকঘরে। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তা শ্রেণি এবং সব কর্মকাণ্ড ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রচলিত চিঠিপত্র বহনের জন্য যে ডাক–ব্যবস্থাটি ছিল, সেই নেটওয়ার্কটিকে এখন ডিজিটাল কমার্সের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। ডাক বিভাগ হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রসেনা। ডিজিটাল–ব্যবস্থা ছাড়া ভবিষ্যতে কোনো অর্থব্যবস্থা থাকবে না বলেও মনে করেন তিনি।

সচিবালয়ে আজ বুধবার ডাকঘর সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) সাধারণ ও মেয়াদি হিসাব অনলাইনের আওতায় আনার কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অর্থ বিভাগের আওতায় ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর সারা দেশে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক, পরিবার ও পেনশনার—এ চার ধরনের সঞ্চয়পত্র অনলাইনে কেনার কার্যক্রম শুরু হয় একই বছরের ১ জুলাই থেকে। বাকি ছিল ডাকঘর সঞ্চয়ের সাধারণ ও মেয়াদি হিসাব। এখন এটিও চলে এল অনলাইন পদ্ধতির আওতায়। এখানে আমানত রাখলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) লাগবে। টাকা দুই লাখ টাকার বেশি হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) লাগবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ডাকঘর সঞ্চয় কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, তাদের জন্যই এটা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। চাই না যে ব্যবসায়ীরা এসে তা কিনুক।’ ডাকঘর ধারণাটাই হারিয়ে গিয়েছিল, এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব না নিলে ডাকঘর আর দেখা যেত না। অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকা জমা রাখার অত পদ্ধতি তো দেশে নেই। মানুষ কি তাহলে বালিশের নিচে টাকা রাখবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা অনেক আগেই বুঝেছিলেন।

ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার কমিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। তিন বছর মেয়াদি হিসাবের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৬ শতাংশ। মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য ১০ দশমিক ২০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ এবং দুই বছরের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদের হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৫ শতাংশ।

সংসদের ভেতরে–বাইরে সমালোচনা শুরু হলে একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রী তা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেন। আজ অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদের হার আগেরটাই থাকবে।

অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, যেহেতু ব্যাংক খাতে সুদের হার কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় ডাকঘর সঞ্চয় কর্মসূচির সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দেখা গেছে, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অনেকে সঞ্চয় কর্মসূচিতে নিয়ে রাখছে। যে হিসাবে ২০০ কোটি টাকা আসত, অল্প সময়ের মধ্যেই সে হিসাবে এসে যায় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা।

অর্থসচিব বলেন, ব্যাংক থেকে কেউ যাতে টাকা না নিয়ে আসতে পারেন, সে জন্যই স্বয়ংক্রীয় ব্যবস্থা। এ কাজটি করতে এক বছর লাগত, করা হয়েছে মাত্র এক মাসে। এতে কোনো খরচও হয়নি।