২০ টাকা পেলেই চাষির লাভ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে চলতি মৌসুমে এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিদের গড়ে ১২ টাকার মতো ব্যয় হবে। এই পেঁয়াজ চাষিরা যদি ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারেন, তাহলে তাঁদের লাভ হবে।

এই হিসাব কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া নিয়ে এক প্রতিবেদনে হিসাবটি সংযুক্ত করে বলেছে, স্থানীয় চাষিদের সুরক্ষার জন্য পেঁয়াজ আমদানির ওপর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। যদিও সরকার এখনো শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়নি। 

এদিকে গতকাল রোববার থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। নিজেদের বাজার সামলাতে ভারত গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর বাংলাদেশে পণ্যটির দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। 

ভারত রপ্তানি খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয় গত মাসে, যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিকেল থেকে পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে ভারতের মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও কলকাতার আশপাশ থেকে আসা পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। এদিকে দেশীয় নতুন মৌসুমের হালি পেঁয়াজও বাজারে আসতে শুরু করেছে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ সোমবার ওই পেঁয়াজ বাজারে এলে দামের ওপর প্রভাব বোঝা যাবে। অবশ্য ভারত রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই দেশে দাম কমছে।

ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়, যা দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ১০০ টাকার বেশি ছিল। পাইকারি বাজারের মধ্যে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে সকালে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৩ টাকার আশপাশে বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা। 

ব্যয় ২০ শতাংশ বেড়েছে

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ১ একরে সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ১৬৯ টাকা। একরপ্রতি উৎপাদন ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৮ কেজি। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১ টাকা ৯৭ পয়সা বা ২০ শতাংশ বেড়েছে। কৃষক যদি ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন, তাহলে প্রতি একর জমিতে লাভ হবে ৩৮ হাজার ৯৯১ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ট্যারিফ কমিশনের পাশাপাশি তারা আরেকটি সংস্থার মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব করিয়েছে।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা জরিপ করে দেখেছি, পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ১৬ থেকে ১৭ টাকা। কেউ বলছে ১২ থেকে ১৯ টাকা। গড় করলে ১৬ থেকে ১৭ টাকাই হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করব, কৃষক যাতে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। যদি সেই দাম না পান, তাহলে যা করা দরকার, সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে চাই। আমাদের কৃষকদের আগে সন্তুষ্ট রাখতে হবে। নইলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যাবে না।’ 

৩০-৩৫ শতাংশ শুল্কের সুপারিশ

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজ টনপ্রতি গড়ে ১৬৪ মার্কিন ডলার দরে আমদানি হয়েছিল। এর সঙ্গে ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি যোগ করে এবার আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে ১৭১ ডলার। 

কমিশন বলছে, ৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হলে অন্যান্য খরচসহ মোট আমদানি মূল্য দাঁড়াবে প্রতি কেজি ২২ টাকার কিছু বেশি। আর ৩০ শতাংশ শুল্ক বসালে প্রতি কেজি পেঁয়াজের অবতরণ মূল্য দাঁড়াবে ১৯ টাকার মতো। কমিশন ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ের জন্য শুল্ক আরোপ ও পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজরদারির সুপারিশ করেছে। 

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তাকে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ দিতে হবে। আবার কৃষককেও উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া জরুরি। তাই ভারত কত দরে রপ্তানি করে, সেটা দেখে পেঁয়াজে সাময়িক শুল্ক বসাতে হবে।